Published : 23 Jan 2025, 08:14 PM
সংবাদ সম্মেলনে আসার পথে থামলেন রায়ান বার্ল। গ্যালারি থেকে দর্শকদের চিৎকার, ‘ব্রাদার, ব্রাদার... সেলফি… সেলফি..।’ দর্শকদের কাছে গিয়েও তখন ছবি তোলার আবদার মেটালেন না তিনি। তবে হাসিমুখে প্রতিশ্রুতি দিলেন, ফেরার পথে পূরণ করবেন সবার ইচ্ছা। তার কাছে গিয়ে অভিনন্দন জানাতেই দুর্বার রাজশাহীর অলরাউন্ডার চওড়া হাসিতে বললেন, ‘কী দারুণ এক জয়…!’
এমন জয়ের কারিগরদের একজন বার্ল নিজেই। রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে নিজের মূল কাজে তিনি ব্যর্থ, আউট হয়ে যান প্রথম বলেই। তবে বোলিংয়ে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন সম্ভবত দলের আর নিজের প্রত্যাশাকেও। অজেয় হয়ে ওঠা রংপুরকে পরাজয়ে ডুবিয়ে নিজেদের প্লে-অফ সম্ভাবনা উজ্জ্বল করে তোলার পর সংবাদ সম্মেলনের পুরোটা সময় হাসি লেগে রইল তার চোখে-মুখে।
জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেন বার্ল। সহজাত লেগ স্পিনের সঙ্গে গতির তারতম্যের মিশেলে রংপুর ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষা নেন তিনি। ৪ ওভারে মাত্র ২২ রান খরচায় তার ঝুলিতে জমা পড়ে ৪টি উইকেট।
দলের চরম প্রয়োজনের সময় গুরুত্বপূর্ণ সব ব্রেক থ্রু দিয়ে ম্যাচ-সেরার স্বীকৃতি পান তিনি। ৩০ বছর বয়সী ক্রিকেটার জানালেন, একটি কৌশল কাজে লাগিয়ে এ দিন শিকার ধরেছেন তিনি।
“আমি আসলে গতির বৈচিত্র কাজে লাগানোর চেষ্টা করছিলাম। খেয়াল করলে দেখবেন, ওরা লেগ স্পিন ডেলিভারিগুলো বড় শটের তেমন চেষ্টা করেনি। জোরের ওপর করা বলগুলো মারার চেষ্টা করেছে, সেখান থেকেই উইকেট পেয়েছি।”
চিটাগং কিংসের বিপক্ষে আগের ম্যাচে ফিল্ডিংয়ের সময় অ্যাঙ্কেলে চোট পান বার্ল। তাই পরে ব্যাটিংয়ে নামতে পারেননি তিনি। তিন দিনের বিরতিতে সেই চোট কাটিয়ে ব্যাটিংয়ে ফিরলেও সুবিধা করতে পারেননি।
অষ্টম ওভারে ব্যাটিংয়ে গিয়ে প্রথম বলেই উইকেট উপহার দিয়ে ফেরেন তিনি। তবে এই ম্যাচ ব্যতিক্রম। আগের ম্যাচগুলোতে ব্যাট হাতেও তিনি ছিলেন সফল। সব মিলিয়ে ৯ ইনিংসে এক ফিফটির সঙ্গে তিনটি চল্লিশছোঁয়া ইনিংস খেলেন তিনি। ৬১.২৫ গড় ও ১৪৭ স্ট্রাইক রেটে তার সংগ্রহ ২৪৫ রান। ব্যাটে-বলে পারফরম্যান্সে চলতি আসরে ম্যাচ-সেরা হয়েছিলেন আরেকবার।
এবার ব্যাটিংয়ে খালি হাতে ফিরলেও নিজের অন্য দক্ষতা দিয়ে অবদান রাখতে পারার তৃপ্তি বার্লের।
“শূন্য রানে আউট হওয়া অবশ্যই হতাশাজনক। তবে অলরাউন্ডার হওয়ার সৌন্দর্য্য এটাই। খেলাটির অন্য দিক দিয়েও অবদান রাখা যায়। সেটি করতে পারায় খুব খুশি।”
অথচ ম্যাচটি শুরুর আগে নিশ্চিতভাবেই ফেবারিট ছিল বিপিএলে টানা ৮ ম্যাচ জেতা রংপুর। এর আগে গ্লোবাল সুপার লিগের তিন জয়সহ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের কোনো দলের টানা ১১ জয়ের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের রেকর্ডও স্পর্শ করে তারা।
এছাড়া ক্রিকেটীয় শক্তিমত্তায়ও যোজন এগিয়ে রংপুর। তাদের বিপক্ষে ম্যাচটিকে টুর্নামেন্টে টিকে থাকার জন্য বাঁচা-মরার লড়াই হিসেবে নেয় রাজশাহী। সেই অভিযানে দারুণ জয়ের পর এবার প্লে-অফের চোখ তাদের।
“খুবই আনন্দময় অনুভূতি। টুর্নামেন্টের এক নম্বর দলের বিপক্ষে জেতায় তৃপ্তি একটু বেশি। তারা দারুণ ছন্দে ছিল, ক্রিকেটাররা ভালো ফর্মে ছিল। আমাদের জন্য বাঁচা-মরার লড়াইয়ের মতো ছিল। এখন প্লে-অফ খেলার চেষ্টা করব।”
ক্রিকেটীয় চ্যালেঞ্জ ছাড়াও রাজশাহীর ক্রিকেটারদের জিততে হয়েছে মাঠের বাইরের নানা কিছুর বিরুদ্ধেও। চট্টগ্রামে আসার পর থেকেই পারিশ্রমিক সমস্যায় টালমাটাল দলটি। তবে মাঠে নেমে গেলে এসব মাথায় থাকে না বলেই দাবি বার্লের।
“ক্রিকেটার হিসেবে মাঠে গেলে শুধু জেতার কথাই চিন্তা করবেন। আমাদের জন্য এখন ‘ডু অর ডাই’ ধরনের পরিস্থিতি। জিততেই হবে। আমাদের মনোযোগ এখানেই। দুই ম্যাচ বাকি আছে আমাদের। মানসিকভাবে এই জায়গায়ই আছি আমরা। এই ধারাবাহিকতা শেষ দুই ম্যাচেও ধরে রাখতে চাই।”
দশ ম্যাচে রাজশাহীর এটি চতুর্থ জয়। পয়েন্ট টেবিলের চার নম্বরে উঠে গেছে তারা। বাকি দুই ম্যাচ জিতলে অনেকটা নিশ্চিতভাবেই শীর্ষ চারে থাকবে তারা। এমনকি এক ম্যাচ জিতলেও কিছু সমীকরণ মিলিয়ে শেষ চারে যাওয়া সম্ভব।
সেই অভিযানে ঢাকায় ফিরে রোববার রংপুরের বিপক্ষে ফিরতি ম্যাচ খেলবে রাজশাহী। পর দিনই প্রথম পর্বের শেষ ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ সিলেট স্ট্রাইকার্স।