Published : 03 Sep 2022, 03:11 PM
জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট ইতিহাসে দিনটি স্মরণীয়। মহাপরাক্রমশালী ও অভিজাত ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ অস্ট্রেলিয়াকে তারা প্রথমবার হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়ারই মাঠে। দারুণ জয়ের এই ম্যাচে দলীয় ও ব্যক্তিগত বেশ কিছু অর্জন ধরা দিয়েছে তাদের। তেমনি অস্ট্রেলিয়ারও ডেভিড ওয়ার্নার, মিচেল স্টার্করা দেখা পেয়েছেন ব্যক্তিগত রেকর্ড ও মাইলফলকের।
ইতিহাস
টাউন্সভিলে শনিবার জিম্বাবুয়ের ৩ উইকেটের জয় অস্ট্রেলিয়ার মাঠে তাদের বিপক্ষে তিন সংস্করণ মিলিয়েই জিম্বাবুয়ের প্রথম জয়।
জিম্বাবুয়ে প্রথমবার অস্ট্রেলিয়ায় খেলেছিল ১৯৯২ বিশ্বকাপে। হোবার্টে সেই ম্যাচে ১২৮ রানে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। সেই থেকে এই ম্যাচের আগ পর্যন্ত ১৩ ওয়ানডে ও দুই টেস্টের একটি পরিত্যক্ত, বাকি সবকটিতে অস্ট্রেলিয়ার জয়।
অস্ট্রেলিয়ার সর্বনিম্ন
এ দিন ১৪১ রানে অল আউট হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩৩ ওয়ানডেতে এই প্রথমবার ২০০ রানের কমে শেষ হলো তাদের ইনিংস।
আগের সর্বনিম্ন ২০৯ ছিল ২০১৪ সালে হারারেতে। এই ম্যাচের আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের সবশেষ জয়ও সেটিই।
একার লড়াই
অস্ট্রেলিয়ার ১৪১ রানের মধ্যে ডেভিড ওয়ার্নার একাই করেছেন ৯৪। পূর্ণাঙ্গ ইনিংসে একজনের অবদানের শতকরা হারে যা ওয়ানডে ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
অস্ট্রেলিয়ান ইনিংসের ৬৬.৬৬ শতাংশ রান করেছেন ওয়ার্নার একাই।
এর বিশ্বরেকর্ডটি গত ৩৮ বছর ধরে ভিভ রিচার্ডসের। ১৯৮৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের ৬৯.৪৮ শতাংশ রান করেছিলেন এই কিংবদন্তি একাই।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেদিন ১০২ রানে ৭ উইকেট ও ১৬৬ রানে ৯ উইকেট হারানোর পরও ২৭২ রানের পুঁজি পেয়েছিল রিচার্ডসের অবিশ্বাস্য ইনিংসে। ১৮৯ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।
বার্লের কীর্তি (১)
৩-০-১০-৫, অবিশ্বাস্য এক বোলিং ফিগার রায়ার্ন বার্লের। কোনো ওয়ানডে ম্যাচে বোলিং শেষ হওয়ার পর সবচেয়ে কম ওভারে ৫ উইকেট শিকারের রেকর্ড এটিই।
এর আগে ৪.৩ ওভারে ৫ উইকেট নিয়ে বোলিং শেষ করেছিলেন কোর্টনি ওয়ালশ। ১৯৮৬ সালে শারজাহতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই ম্যাচে এই ক্যারিবিয়ান কিংবদিন্তর বোলিং ফিগার এখনও বিস্ময় জাগায় তুমুল, ৪.৩-৩-১-৫!
বার্লের কীর্তি (২)
বোলিং শুরু করার পর ৫ উইকেট পূর্ণ করতে স্রেফ ১৮ বল লেগেছে রায়ার্ন বার্লের। অল্পের জন্য তিনি ছুঁতে পারেননি ওয়ানডেতে সবচেয়ে কম বলের মধ্যে ৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড।
২০০৩ বিশ্বকাপে পিটারমারিজবার্গে বাংলাদেশের সেই দুঃস্বপ্নের ম্যাচে প্রথম ওভারে ৪ উইকেটের পর শ্রীলঙ্কার চামিন্দা ভাস ৫ উইকেট পূর্ণ করেছিলেন ১৬ বলে।
২০০৩ সালে নেদারল্যান্ডসের টিম ফন ডার গুগটেন ২০ বলের মধ্যে ৫ উইকেট নেন কানাডার বিপক্ষে।
বার্লের কীর্তি (৩)
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫ উইকেট নেওয়া জিম্বাবুয়ের প্রথম বোলার রায়ান বার্ল। আগের সেরা ৪২ রানে ৪ উইকেট ছিল ডানকান ফ্লেচারের, ১৯৮৩ বিশ্বকাপে ট্রেন্ট ব্রিজে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই দুই দলের প্রথম দেখা ছিল সেটি। অপরাজিত ৬৯ রানের ইনিংসের পর ৪ উইকেট নেন ফ্লেচার। জিম্বাবুয়ে ১৩ রানে হারিয়ে দেয় অস্ট্রেলিয়াকে। এখনও পর্যন্ত সেটিকে মনে করা হয় বিশ্বকাপ ইতিহাসের স্মরণীয় আপসেটগুলোর একটি।
বার্লের কীর্তি (৪)
এই ১০ রানে ৫ উইকেট ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়ের কোনো বোলারের দ্বিতীয় সেরা বোলিং। সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডটি গ্রায়েম ক্রিমারের। ২০০৯ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে হারারেতে ৪৬ রানে ৬ উইকেট নেন এই লেগ স্পিনার।
বার্লের কীর্তি (৫)
অস্ট্রেলিয়ার মাঠে কোনো স্পিনারের দ্বিতীয় সেরা বোলিং কীর্তি গড়লেন রায়ান বার্ল।
স্পিন বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়ায় সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড যুজবেন্দ্র চেহেলের। ২০১৯ সালে মেলবোর্নে ৪২ রানে ৬ উইকেট নেন ভারতীয় এই লেগ স্পিনার।
বার্লের কীর্তি (৬)
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সবচেয়ে কম খরচে ৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডও গড়ে ফেলেছেন রায়ান বার্ল।
১৫ রানে ৫ উইকেট নিয়ে আগের রেকর্ড ছিল ভারতের রবি শাস্ত্রীর।
অস্ট্রেলিয়ার মাঠে সবচেয়ে কম রান দিয়ে ৫ উইকেটের রেকর্ডও এখন বার্লের। এখানেও আগের রেকর্ড ছিল শাস্ত্রীর।
দ্রুততম স্টার্ক
রায়ান বার্লের উইকেট নিয়ে ওয়ানডেতে সবচেয়ে কম ম্যাচে ২০০ উইকেট ছুঁয়েছেন মিচেল স্টার্ক। ১০২ ম্যাচে এই মাইলফলক ছুঁয়েছেন তিনি। ১০৪ ম্যাচে ২০০ ছুঁয়ে ১৯৯৯ সালে আগের রেকর্ডটি গড়েছিলেন পাকিস্তানের স্পিন গ্রেট সাকলায়েন মুশতাক।
হেইজেলউডের সেঞ্চুরি
ম্যাচে তিন উইকেট নেওয়ার পথে ওয়ানডেতে ১০০ উইকেট পূর্ণ হয়েছে জশ হেইজেলউডের। অস্ট্রেলিয়ার ১৯তম বোলার হিসেবে এই মাইলফলকে পৌঁছালেন তিনি।
৬৪ ম্যাচে তার ১০০ উইকেট হলো। তার চেয়ে কম ম্যাচ খেলে ১০০ হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার কেবল ৬ জনের।