Published : 13 Jul 2023, 09:26 AM
শিবনারাইন চন্দরপলকে টেস্টে চার দফায় আউট করেছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ভারতীয় অফ স্পিনারের সুদূরতম কল্পনাতেও নিশ্চয়ই তখন ছিল না, এক সময় ক্যারিবিয়ান এই গ্রেটের ছেলেকেও তিনি আউট করবেন! এটিই এখন বাস্তব। চমকপ্রদ এই কীর্তি গড়ে টেস্ট ইতিহাসের একটি পাতায় নাম লেখা হয়ে গেল অশ্বিনের।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ভারতের ডমিনিকা টেস্টের প্রথম দিনে বুধবার অশ্বিন প্রথম উইকেটের দেখা পান তেজনারাইন চন্দরপলকে ফিরিয়ে। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বাঁহাতি ওপেনারকে বোল্ড করে দেন তিনি। বিরল কীর্তিও তাতে গড়া হয়ে যায়।
১৪৬ বছরের টেস্ট ইতিহাসে বাবা ও ছেলে, দুজনকেই আউট করা মাত্র পঞ্চম বোলার অশ্বিন।
এই ৫ দফায় আউটের শিকার হয়েছেন কেবল দুটি বাবা-ছেলে জুটি। দুই বোলারের কাছে আউট হয়েছেন নিউ জিল্যান্ডের ল্যান্স কেয়ার্নস ও ক্রিস কেয়ার্নস জুটি, তিন বোলারের কাছে আউট হয়েছেন চন্দরপল বাবা-ছেলে জুটি।
ইয়ান বোথামের শিকার ল্যান্স ও ক্রিস কেয়ার্নস
টেস্ট ইতিহাসে প্রথমবার বাবা-ছেলেকে আউট করার রেকর্ড গড়েন ইংলিশ কিংবদন্তি ইয়ান বোথাম। তার শিকার নিউ জিল্যান্ডের পেস বোলিং অলরাউন্ডার বাবা-ছেলে ল্যান্স ও ক্রিস কেয়ার্নস।
ল্যান্সের টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৭৪ সালে, শেষ টেস্ট ম্যাচটি খেলেন তিনি ১৯৮৫ সালে। বাবার শেষ টেস্টের চার বছর পর টেস্ট অভিষেক ক্রিসের। তার শেষ টেস্ট ২০০৪ সালে। বোথামের অভিষেক ১৯৭৭ সালে, শেষ করেন ১৯৯২ সালে।
১৯৭৮ সালের ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্টে ল্যান্স কেয়ার্নসকে শূন্য রানে ফেরান বোথাম। পরে ১৯৮৩ সালের সিরিজে আরও দুই দফায় ল্যান্সকে আউট করেন তিনি; একবার ওভালে, আরেকবার লর্ডসে।
ক্রিস কেয়ার্নসকে আউট করেছেন বোথাম একবারই, ১৯৯২ সালে ওয়েলিংটনে।
ওয়াসিম আকরামের শিকার ল্যান্স ও ক্রিস কেয়ার্নস
১৯৮৫ সালে ওয়াসিম আকরামের যখন টেস্ট অভিষেক, ল্যান্স কেয়ার্নসের ক্যারিয়ার তখন শেষের পথে। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টেই ডানেডিনে দুই ইনিংসে ৫টি করে উইকেট নেন আকরাম। এর মধ্যেই একটি উইকেট ছিল ল্যান্স কেয়ার্নসের।
১০ বছর পর ক্রাইস্টচার্চে ক্রিস কেয়ার্নসকে বোল্ড করে আকরাম স্বাদ পান বাবা ও ছেলের উইকেটের।
মিচেল স্টার্কের শিকার শিবনারাইন ও তেজনারাইন চন্দরপল
২১ বছর আর ১৬৪ টেস্টের সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ২০টি টেস্ট ম্যাচ খেলেন শিবনারাইন চন্দরপল। অস্ট্রেলিয়ানদের বিপক্ষে তার শেষ লড়াই ছিল ২০১২ সালে। ওই সফরেই ডমিনিকায় এই ব্যাটিং গ্রেটকে এলবিডব্লিউ করেন মিচেল স্টার্ক।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট দলের হয়ে তেজনারাইনের প্রথম সফর অস্ট্রেলিয়া দিয়েই। গত ডিসেম্বরে ওই সফরে দুই টেস্টেই একবার করে স্টার্কের শিকার হন বাঁহাতি এই ওপেনার। প্রথমটি পার্থে, পরেরটি অ্যাডিলেইডে।
সাইমন হার্মারের শিকার শিবনারাইন ও তেজনারাইন চন্দরপল
এই তালিকায় সাইমন হার্মারের নামটি নিঃসন্দেহে বিস্ময় জাগানিয়া। দক্ষিণ আফ্রিকার এই অফ স্পিনার এখনও পর্যন্ত মোটে টেস্ট খেলেছেন ১০টি। এর মধ্যেই চন্দরপল বাবা-ছেলের উইকেট তিনি নিয়ে ফেলেছেন।
২০১৫ সালের জানুয়ারিতে কেপ টাউন টেস্টে মুখোমুখি হন হার্মার ও শিবনারাইন। হার্মারের সেটি ছিল অভিষেক টেস্ট, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শিবনারাইনের সেটিই শেষ টেস্ট। প্রথম ইনিংসে হার্মারের বলে স্টাম্পড হন শিবনারাইন।
ওই বছর ৫ টেস্ট খেলার পর দীর্ঘ বিরতিতে ছিলেন হার্মার। কলপ্যাক চুক্তি নিয়ে তিনি ইংল্যান্ডে চলে যান। লম্বা নির্বাসনের পর গত বছর আবার দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে টেস্টে ফেরেন তিনি। এই বছরের মার্চে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জোহানেসবার্গে তিনি আউট করেন তেজনারাইনকে।
রবিচন্দ্রন অশ্বিনের শিকার শিবনারাইন ও তেজনারাইন চন্দরপল
শিবনারাইনকে দুই সিরিজে চার বার আউট করেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ২০১১ সালের সিরিজে দিল্লি ও কলকাতায়, ২০১৩ সালের সিরিজে কলকাতায় ও মুম্বাইয়ে।
এবার ডমিনিকায় অফ স্পিনারদের জন্য স্বপ্নের এক ডেলিভারিকে তেজনারাইনকে বোল্ড করলেন অশ্বিন।
এই সিরিজে আরও তিন ইনিংসে তেজনারাইনকে পেতে পারেন অশ্বিন। ভবিষ্যতে পেতে পারেন আরও সিরিজে। চন্দরপল পরিবারের সঙ্গে অশ্বিনের উইকেট-সংযোগ তাই দেখা যেতে পারে আরও।