Published : 05 Jun 2025, 05:35 PM
যেসব বেপারিরা একসঙ্গে বেশি গরু কেনেন তাদের পশু রাখার জন্য সমস্যায় পড়তে হয়। সেই সমস্যা দূর করতেই চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলারর ডুগডুগি গ্রামের গরু ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম তৈরি করেছেন গরু-ছাগলের ‘আবাসিক হোটেল’।
নাম দিয়েছেন, ‘আরিফ গবাদী পশুর হোটেল কাম ওয়ারহাউজ’। এটির অবস্থান জেলার সবচেয়ে বড় গরুর বাজার ডুগডুগি এলাকায়।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এটি একটি ভাল ও অভিনব উদ্যোগ। এখানে গরু রেখে বেপারিরা নিরাপদে তাদের অন্য কাজগুলো করতে পারেন।
আরিফুল ইসলাম বলছিলেন, তিনি নিজে গরুর ব্যবসা করেন। অনেক সময় চার-পাঁচটি গরুও কিনতে হয়। একটি গরু কিনে কোথায় রাখবেন, কে সেটার দেখাশোনা করবে, গরু চুরি হয়ে যায় কিনা- এমন নানা বিষয় তাকে সবসময় ভাবতে হয়। মূলত সেই চিন্তা থেকেই তিনি গরু-ছাগলের ‘আবাসিক হোটেল’ তৈরির চিন্তাটি করেছেন।
তিনি বলছিলেন, “ডুগডুগির পশুর হাটের নামডাক আছে বেশ। দূর-দূরান্ত থেকে বেপারিরা এখানে যেমন গরু কিনতে আসেন, তেমনি অনেক খামারিও তাদের গরু বিক্রি করতে আসেন। ঢাকা থেকে যেসব বেপারি গরু কিনতে চুয়াডাঙ্গায় আসেন তারা ১৫-২০টি গরু একসঙ্গে কিনে নিয়ে যান।
“দুই-তিনটি গরু কেনার পর বাকি গরু কিনতে গিয়ে তাদের সমস্যা দেখা দেয়। আগের কেনা গরু কোথায় রাখবেন তা নিয়ে সমস্যায় পড়ে যান বেপারিরা। এখানে গরু রাখলে আর সেই দুর্ভোগ থাকবে না। গরু ‘চেক-ইন’ হওয়ার পর থেকে ‘চেক-আউট’ হওয়া পর্যন্ত সব দায়িত্ব আমাদের কর্মীদের।”
“এখানে প্রতিটি গরুর জন্য ২৪ ঘণ্টায় ৫০০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আর প্রতিটি ছাগলের জন্য ভাড়া ৩০০ টাকা। খাওয়া এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার জন্য আলাদা কোনো চার্জ নেই।”
আরিফুল বলেন, ‘আবাসিক হোটেলটি’ চালুর পর বেশ সাড়া পড়েছে, অনেকেই আসছেন হোটেলে গরু রাখতে। আপাতত ১৭টি গরু রাখার ব্যবস্থা আছে হোটেলে। চাহিদার ভিত্তিতে এটা বড় করার পরিকল্পনা রয়েছে তার।
এই ‘আবাসিক হোটেলটি’ ডুগডুগি পশুর হাট থেকে বাম দিকে তিন থেকে চার মিনিটের হাঁটা পথ। ব্যবসায়ীরা হাট থেকে গরু কিনে দ্রুত ‘হোটেলে’ চলে আসতে পারবেন। একটি আম বাগানের ভেতর। বেশ প্রাকৃতিক আর মনোরম পরিবেশ।
যে ভবনটিতে এই ‘হোটেল’টি করা হয়েছে সেটি প্রায় ২০ হাতের মত লম্বা আর ১২ হাতের মত চওড়া হবে। ইটের দেয়ালের উপর টিনের চাল দেওয়া। ভেতরে যেন প্রচুর আলো-বাতাস ঢুকতে পারে সেজন্য দেয়ালে গ্রিল লাগানো হয়েছে।
দেয়ালের সামনের অংশটা ফাঁকা, পাশেও কিছুটা এমন রাখা হয়েছে। পেছনে দেওয়াল হলেও প্রচুর ছিদ্র রাখা হয়েছে। আছে পানির ব্যবস্থা। গরুর মলমূত্র সরে যাওয়ার জন্য মেঝেতে বিশেষভাবে ড্রেন কাটা হয়েছে। প্রতিটি গরুর জন্য আলাদা খাবারের পাত্রও রয়েছে। ভবনটির সামনে-পেছনে প্রচুর খোলা জায়গাও রয়েছে।
আরিফুল জানান, তার এই হোটেলটি করতে ওয়েব ফাউন্ডেশন নামের একটি বেসরকারি সংস্থা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। তারা তাকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে। এ ছাড়া পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ), ইফাদ, ড্যানিডাও পরামর্শ দিয়েছে। বাকি টাকা তাকে খরচ করতে হয়েছে।
গরুর দেখাশোনার মূল কাজটা আরিফুল নিজেই করেন। তবে সঙ্গে সহায়তার জন্য দুজন কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন।
আরিফুল বলেন, “হোটেলটি হাটের কাছে হওয়ায় বেপারিরা বেশ খুশি। সারাবছর যেহেতু এখানে গরু ও ছাগলের হাট বসে সে কারণে হোটেলটিও সারা বছর চালু থাকবে। কর্মীরা গরুকে গোসল করান। নিয়মিত তিন-চার বেলা খাবার দেন। প্রয়োজন হলে বাইরের খোলা মনোরম পরিবেশে গরু ঘুরিয়ে আনেন।
“এখানে খাবার-দাবার বুফে সিস্টেমে। সব দেওয়া থাকে। খড়, খাস, বিছালি, ভুসি, পানি সব সামনে দেওয়া থাকে। গরুর যা ইচ্ছা তাই খেতে পারে। একটা খামারে যেভাবে গরু রাখা হয় সেভাবে গরু রেখে খাওয়ানো হয়ে থাকে। মালিকের কোনো টেনশন নেই।”
মানুষের আবাসিক হোটেলের মতই ‘চেক-ইন’ আর ‘চেক-আউট’ এর ব্যবস্থাও রেখেছেন আরিফুল ইসলাম। বলছিলেন, “যে সময়ে গরু হোটেলে ঢুকবে পরের দিন সেই সময়টি গরুর ‘চেক-আউট’ হিসেবে গণ্য হবে।”
গরুর মালিকদেরও থাকা-খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা আছে কি-না জানতে চাইলে আরিফুল হাসতে হাসতে বলেন, “না, এখনও সেই ব্যবস্থা করতে পারিনি। গরুর ব্যবসায়ীরা সাধারণত এখান থেকে তিন-চার মাইল দূরে গিয়ে থাকেন।”
আবাসিক এই গবাদি পশুর হোটেল সম্পর্কে ডুগডুগি গ্রামের আক্কাস আলী বলেন, “খুব ভাল উদ্যোগ। গরু কেনার পর তখন কোথায় রাখা যাবে তা নিয়ে ছিল বড় ঝামেলা। সেই ঝামেলা আর থাকল না। ডুগডুগি হাট থেকে অনেকেই গরু কিনে এখানে রাখবে বলে মনে হয়।”
চুয়াডাঙ্গা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামিমুজ্জামান বলেন, “আরিফুল ইসলাম একটি ভাল উদ্যোগ নিয়েছেন। এই উদ্যোগের ফলে উপকৃত হচ্ছেন গরু ব্যবসায়ীরা। গরু কেনার পর এখানে রাখা যাচ্ছে কিংবা হাটে তোলার আগে গরুকে এখানে বিশ্রামে রাখা যাচ্ছে।
“কোনো গরুর বেপারি হাট থেকে ১০টি গরু কিনে ঢাকায় কিংবা অন্য কোনো জেলায় নিয়ে যাবেন; তিনি ধীরেসুস্থ্যে একটি-দুটি করে গরু কিনে এই হোটেলে রেখে বাকি গরু কেনায় মনোযোগ দিতে পারবেন। ভাল উদ্যোগ। এই উদ্যোগ আরো প্রসারতা লাভ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।”