Published : 10 Jul 2025, 10:37 PM
প্রধান বিচারপতি নিয়োগে সরকারের হস্তক্ষেপ বন্ধ ও তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফেরানোর প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলেও এ দুটি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে আরও আলোচনা চালানোর কথা বলেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ।
বৃহস্পতিবার ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেন,
“প্রধান বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত দুটি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।
এগুলো হল-সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদে বিদ্যমান ব্যবস্থা পরিবর্তন এবং আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের মধ্য থেকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ।”
রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের সংলাপের ১১তম দিন ছিল এদিন। বেলা ১১টায় সংলাপ শুরু হয়, চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।
বৈঠক শেষে আলী রীয়াজ বলেন, “প্রধান বিচারপতি হিসেবে কর্মে নিযুক্ত জ্যেষ্ঠতম একজনকে না কর্মে জ্যেষ্ঠ দুইজনের মধ্যে একজন নিয়োগ করা হবে সেই বিষয়ে দুটি মত উপস্থিত আছে৷
কমিশন এ বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোকে বলেছে আরেকটু বিবেচনা করে সুনির্দিষ্ট মতামত দেওয়ার জন্য। আশা করি পরবর্তী আলোচনায় এই বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছে যাবো।”
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলো যে প্রস্তাব দিয়েছে তার ক্ষানিকটা অগ্রগতি হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক প্রধানকে নিয়োগ করার ক্ষেত্রে আইনসভার মধ্য থেকে প্রস্তাব করা বা নিয়োগের ব্যবস্থা করা-এটাই ঐক্যমত্য কমিশন থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
“আজকে এই বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে মতামত পাওয়া গিয়েছে।”
জরুরি অবস্থা ঘোষণা সংক্রান্ত আলোচনার বিষয়ে কমিশনের সহসভাপতি বলেন, “জরুরি অবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো দুইটি বিষয়ে একমত হয়েছে। সংবিধানে জরুরি অবস্থা ঘোষণার যে বিধান রয়েছে তা সংশোধন করতে হবে, যেন জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিষয়টি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না হয়।”
তিনি বলেন, এই বিষয়গুলো আরও সুস্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করে রাজনৈতিক দলগুলো। এই কারণে এই বিষয়টি আরও কীভাবে সুস্পষ্ট করা যায় আর বিভিন্ন বিষয় সংযুক্ত করা যায় তা নিয়ে আলোচনা চলছে। যেমন অভ্যন্তরীণ গোলযোগ কথাটি আছে এখন এটি না রাখার বিষয়ে রাজনৈতিকদলগুলো একমত হয়েছে। তারা এটাও বিবেচনা করছেন বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ অন্য কারণে জরুরি অবস্থার বিধান কেমন হতে পারে কীভাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণা হলে অন্য ব্যবস্থাপনা গুলো কার্যকর করা যায় এবং কীভাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণা হবে।
বিদ্যমান ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরে রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন।
আলী রীয়াজ বলেন, কমিশনের প্রস্তাবে মন্ত্রিসভার অনুমতি নিয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিধান যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল বলেছে সংসদের কোনো কমিটির মাধ্যমে জরুরি অবস্থা ঘোষণা যায় কিনা। এগুলো নিয়ে আলোচনা চলছে।
আগামী সপ্তাহে এই আলোচনা আরও সুস্পষ্ট হবে, জরুরি অবস্থা বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসা যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় অগ্রগতি হচ্ছে দাবি করেন কমিশনের সহসভাপতি বলেন, “আমরা আশাবাদী এই মাসের মধ্যে একটি সনদ তৈরি করতে পারবো। প্রতিদিনই বেশ অগ্রগতি হচ্ছে। এগুলো তাড়াহুড়োর বিষয় নয়- এ ক্ষেত্রে বিশেষ শব্দ, বাক্য বিবেচনা করতে হচ্ছে। সেগুলো বিবেচনা করেই অগ্রসর হচ্ছি।
“রাজনৈতিক দলগুলো খুবই আন্তরিক হৃদ্যতার সঙ্গে আলোচনা করে অগ্রসর হচ্ছে। পরস্পর পরস্পরের মতামতকে শ্রদ্ধা করছেন।”
‘অভুত্থানের স্বীকৃতি চতুর্থ তফসিলে রাখা যেতে পারে’
জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হলে ২০২৪ সালের জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানকে সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে বিএনপি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন।
ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেন, “আমরা জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের তাৎপর্য স্বীকার করি এবং এটিকে জাতীয় ইতিহাসে তার যথার্থ স্থান দেওয়ার পক্ষে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
“প্রশ্ন হলো, কীভাবে তা উপযুক্ত সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করা যায়।”
বিএনপির এ নেতা বলেন, ১৯৭১ সালের অস্থায়ী সরকারের ঘোষণার মত উদাহরণ অনুসরণ করে এই স্বীকৃতি সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
“বিএনপি এরই মধ্যে সরকারের কাছে তাদের ‘জুলাই ঘোষণার’ খসড়া জমা দিয়েছিল, তবে দীর্ঘদিন কোনো সাড়া মেলেনি। সম্প্রতি সরকারের উপদেষ্টাদের কাছ থেকে বিএনপির প্রস্তাবের কিছু অংশ অন্তর্ভুক্ত করে একটি সংশোধিত খসড়া পাঠানো হয়েছে। এর জবাবে বিএনপিও তাদের হালনাগাদ অবস্থান তুলে ধরেছে।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন নিয়ে আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, “বিএনপি বিচার বিভাগকে এই ব্যবস্থার বাইরে রাখার পক্ষে। দলটি এমন দুই-তিনটি বিকল্প ফর্মুলা নিয়ে ভাবছে, যেখানে বিচারপতিদের কেবল শেষ বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
“এসব প্রস্তাব এখনো দলের অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনায় রয়েছে এবং আগামী বৈঠকে তা উপস্থাপিত হতে পারে।”
এছাড়া প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত করা ও আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ দুই বিচারপতির মধ্য থেকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রশ্নে প্রায় ঐকমত্য হওয়ার কথা বলেছেন সালাহউদ্দিন।
রাজনৈতিক উদ্দেশে জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত বিধান ব্যবহার যেন করা না যায় সে বিষয়ে দলগুলো একমত হয়েছে তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ গোলযোগ’ শব্দটি যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি হিসেবে সরিয়ে দেওয়া এবং তার বদলে সাংবিধানিক সংকট, মহামারী ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মত কারণ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব এসেছে। আরেকটি প্রস্তাব হল-মন্ত্রিসভার অনুমোদনের মাধ্যমে জরুরি অবস্থা জারির বিধান নিশ্চিত করা।
বিএনপির এই নেতা বলেন, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, রাজনৈতিক দলগুলো একমত যে জরুরি অবস্থার মধ্যেও কিছু মৌলিক অধিকার—বিশেষ করে জীবনের অধিকার এবং নির্যাতন থেকে সুরক্ষা—অবিচ্ছেদ্য থাকা উচিত। বিএনপি প্রস্তাব করেছে, এসব অধিকার সংরক্ষিত থাকবে, তবে যদি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ৪৭(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধ বা গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হন, তাহলে ব্যতিক্রম প্রযোজ্য হতে পারে।”
আরও পড়ুন: