Published : 29 Apr 2025, 12:45 PM
রাজধানীর গুলশানের কালাচাঁদপুরে গারো মা-মেয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার শেষ হয়নি সাত বছরেও।
চার আসামির মধ্যে একজন নিজেকে ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ দাবি করায় মামলাটি অন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে বয়স নির্ধারণের জন্য। ফলে নাগাদ বিচার কাজ শেষ হবে, তা বলতে পারছে না কেউ।
ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ সাইফুর রহমানের আদালতে মঙ্গলবার এ মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার তৎকালীন এসআই সালাউদ্দিন মিয়ার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ছিল। কিন্তু মামলার নথি এ আদালতে না থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি।
এ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জামাল উদ্দিন বলেন, “এটা একটা আলোচিত মামলা। চার্জগঠন করে মামলার বিচার চলছে। আমরা কয়েকজনের সাক্ষ্যও নিয়েছি। এ পর্যায়ে এসে এক আসামি দাবি করছে, ঘটনার সময় নাকি তার বয়স ১৮ বছরের কম ছিল।
“আদালত এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে মামলার নথি মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠিয়েছেন। সে তখন শিশু ছিল কি না তা নির্ধারণ করবে শিশু আদালত। এর নিষ্পত্তি হলে মামলার বিচার আবার শুরু হবে।”
২০১৮ সালের ২০ মার্চ রাত ৯টার দিকে কালাচাঁদপুর এলাকার একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট থেকে গারো সম্প্রদায়ের বেসেথ চিরান (৬৫) ও তার মেয়ে সুজাতা চিরানের (৪০) লাশ উদ্ধার করা হয়।
পরদিন সুজাতের স্বামী আশিস মানকিন বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় সুজাতের বোনের ছেলে সঞ্জীব চিরানকে আসামি করা হয়।
তদন্তে নেমে সঞ্জীবের আরো তিন বন্ধুর সম্পৃক্ততা পায় পুলিশ। শেরপুরের নালিতাবাড়ী থেকে ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
গ্রেপ্তারের পর তাদের দেওয়া তথ্যের বরাতে র্যাব বলেছিল, ‘ইস্টার সানডের’ উৎসবে আনন্দ করতে টাকা লুট করার জন্যই সঞ্জীব বন্ধুদের নিয়ে নানি ও খালাকে খুন করেন। ওই চারজন দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিও দেন।
তদন্ত শেষে গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) স ম কাইয়ুম ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর চার জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। সঞ্জীব ছাড়া বাকি তিনজন হলেন- রাজু সাংমা, প্রবীণ সাংমা এবং আরো একজন, যিনি ঘটনার সময় অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন বলে দাবি করছেন এখন।
২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল আদালত তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয়। সাক্ষ্যগ্রহণের মাঝপথে ওই আসামির আইনজীবী শাহ ইমরান বয়স নির্ধারণের আর্জি জানান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনার সময় সে শিশু ছিলো। আদালতে আমরা প্রমাণাদি দিয়েছি। আদালত নথিটি মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠিয়েছেন। পরে শিশু আদালত নির্ধারণ করবে সে শিশু ছিল কি না।”
এই আইনজীবী বলেন, “এ মামলায় ঘটনাস্থল থেকে কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। প্রধান আসামি সঞ্জীব ভিকটিমদের আত্মীয়। কিন্তু আমার মক্কেলের সাথে কোনো ধরনের আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগও নাই। আমরা ন্যায়বিচার চাই। অহেতুক যাদের মামলায় জড়িত করা হয়েছে তারা যেন ন্যায়বিচার পায়, সেই প্রত্যাশা করছি।”
যোগাযোগ করা হলে মামলার বাদী আশিস মানকিন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর বন্ধু। রাজু সাংমা উত্তরায় থাকতেন। সঞ্জীব, প্রবীন ও অন্যজন গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছিলেন চাকরির খোঁজে। তারাও রাজুর বাসায় ওঠেন।
পরদিন তারা তিনজন রাজুর কর্মস্থল কুড়িল চৌরাস্তায় যান। তাদের কাছে টাকা না থাকায় সঞ্জীব কালাচাঁদপুরে তার নানীর বাসা থেকে টাকা চুরির পরিকল্পনা করেন।
সে অনুযায়ী কালাচাঁদপুরের একটি হাঁড়ি পাতিলের দোকান থেকে তারা ৬০ টাকা দিয়ে একটু চাকু কেনেন। ২০ মার্চ সকাল ১০টার দিকে প্রবীণসহ দুজন সঞ্জীব চিরানের নানির বাসায় যান। কিন্তু সেখানে সঞ্জীবের মাসী এবং পরিবারের সদস্যদের দেখে ফিরে যান।
পরিকল্পনা বদলে দুপুরের দিকে সঞ্জীবসহ দুজন যান বেসেথ চিরানের বাসায়। পরে রাজু ও প্রবীণ সেখানে যান। বাসায় সুজাতা চিরানের বড় মেয়ে এবং শিশু সন্তান (মেয়ে) ছিল। আসামিরা চু (মদ) আনার জন্য সুজাতাকে ২০০ টাকা দেয়। সেই টাকা দিয়ে সুজাতা চু কিনে আনে।
বিকাল সাড়ে ৪টার পর সুজাতার মেয়ে কাজে চলে যান। তখন বাকিরা সবাই মিলে চু পান করে। সুজাতাকে বেশি করে চুই খাওয়ানোর ফলে একপর্যায়ে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। তখন প্রবীণ ফোন করতে বাইরে যাওয়ার কথা বলে বাইরের দিকটা পাহারা দেন। সঞ্জীব টাকা খোঁজার জন্য বাসার ওয়ারড্রব খোলার চেষ্টা করেন।
তখন বেসেথ চিরান বাইরে থেকে দরজায় নক করেন। সঞ্জীব দরজা খুলে তার নানিকে দেখে সুজাতার ঘরে নিয়ে যান। তখন রাজুসহ দুজন ‘গলায় কাপড় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে বেসেথ চিরানকে মেরে ফেলে লাশ ঘরের খাটের নিচে’ রেখে দেন।
ঘুম থেকে উঠে সুজাতা সব জেনে যাবেন– এই ভয়ে ‘গলা কেটে তাকে হত্যা করেন’ তারা। পরে চাকু পরিষ্কার করে বাথরুমের ফলস ছাদের ওপর ফেলে রাখেন বলে বর্ণনা করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।
মামলায় মোট ২৬ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৯ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
আসামিদের মধ্যে প্রবীণ সাংমা জামিনে আছেন। বাকি তিন আসামি আছেন কারাগারে।
পুরনো খবর
গারো মা-মেয়ে হত্যার অভিযোপত্রে আসামি চারজন