Published : 10 Jul 2025, 09:35 PM
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সামনে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের দুই নেতা ও এক সহকারী প্রক্টরকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টার দিকের এ ঘটনা ঘটে বলে মারধরের শিকার সহকারী প্রক্টর, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম জানান।
তবে হামলা-মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রদল নেতারা বলছে, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নেতারা এক ছাত্রলীগ নেতাকে ক্যাম্পাসে ‘পুনর্বাসনের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছেন’। মারধরের ঘটনা নিয়ে তাদের ছাত্রদলের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ছড়ানো হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন বলেন, বৃহস্পতিবার ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগে আসেন এক ছাত্রলীগ নেতা। সেখানে হাজির হন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও সেখানে যান। পরে সেখানে হট্টগোল, মারামারি বেধে যায়।
ঘটনার বর্ণনায় গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা সাংগঠনিক আলোচনা করতেছিলাম। হঠাৎ দেখতে পাই, ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন শহীদ সাজিদ ভবনের নিচতলায় আমাদের সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ফারুকের ওপর অতর্কিত হামলা করে।
“ফারুক ছাত্রলীগকে শেল্টার দিচ্ছে অভিযোগ করে তার কলার ধরে টেনেহিঁচড়ে মারধর করে। পরে আমি সেখানে জিজ্ঞেস করতে গেলে তারা আমার অণ্ডকোষে লাথি মারে, ফেরদৌসকেও লাথি দেয়। পরে আবার দ্বিতীয় দফায় তারা আমাদের ওপর হামলা চালায়।”
ছাত্রদলের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ফয়সাল মুরাদ বলেন, “যার বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ করার অভিযোগ, তাকে কেউ শেল্টার দিচ্ছে না। বরং আমাদের সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক যে জুলাই আন্দোলনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছে তাকে তারা ছাত্রলীগ শেল্টারের অভিযোগ দিয়ে মারধর করে। অথচ সে ছাত্র অধিকার পরিষদে ছিল।”
ঘটনার পর গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মুখ্য সংগঠক ফেরদৌস শেখ এক ভিডিও বার্তায় হামলার শিকার হওয়ার কথা বলেন। মুরাদ ফেইসবুকে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করেন।
ফেরদৌস এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “আজ (বৃহস্পতিবার) ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে জবি ছাত্রদলের একটি অংশ আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। অথচ ৫ অগাস্টের পূর্ব পর্যন্ত আমি ওতপ্রোতভাবে ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। ছাত্রদলের হয়ে এমন কোনো প্রোগ্রাম নেই যেটায়া অংশগ্রহণ করিনি।
“কিন্তু আজ আমি নতুন রাজনৈতিক দলে যুক্ত হওয়ায় তারা আমাকে ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে আমার এবং আমার বন্ধুরাসহ শিক্ষকদের ওপরও তারা অতর্কিত হামলা চালায়।”
আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ ফেইসবুকে লেখেন, “ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদ আমাকে লাথি মেরেছে। সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন তার গ্রুপ নিয়ে জুলাইয়ের আহত ফেরদৌস, ফারুকের ওপর হাত তুলেছে।
“আমাকে ছাত্রলীগ বলে ট্যাগ দিয়েছে। আমি এর বিচার চাই। ফ্যাসিস্টবিরোধী লড়াইয়ে ছাত্রদলের হয়ে প্রত্যেকটি হরতাল অবরোধে অংশ নিয়েছি।”
সহকারী প্রক্টর শফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হ্যাঁ, আমার গায়ে হাত তুলেছে এটা সত্য। তবে তার রাজনৈতিক পরিচয় আমি অনিশ্চিত। সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই সব পরিষ্কার হওয়া যাবে।
“আমি শুধু আমার দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছি। দুইপক্ষ যখন দুদিক থেকে মারামারি করছিল, তখন আমি সহকারী প্রক্টর হিসেবে তাৎক্ষণিক সমাধান করতে গেলে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে একজন আমার ওপর হামলা করে। আমি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর স্যারকে জানিয়েছি। লিখিত অভিযোগও দিব আমি।”
হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফেরদৌস শেখ (গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ নেতা) আগে ছাত্রদল কর্মী থাকলেও বর্তমানে সে অন্য সংগঠনের পোস্টেড নেতা। বর্তমানে সে ওই সংগঠনের নির্দেশনায় ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাসে পুনর্বাসন করছে।
“ব্যবস্থাপনা বিভাগ ছাত্রলীগের এক নেতাকে তারা ক্যাম্পাসে পুনর্বাসনের সুযোগ করে দিচ্ছে। আমাদের কাছে সেটা উচিত বলে মনে হয়নি। আর তারা যে হামলার কথা ছড়াচ্ছে তা সম্পূর্ণ অবান্তর কথাবার্তা। আমরা ঘটনাটির সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে প্রক্টর বরাবর লিখিত জমা দিব।”
প্রক্টর অধ্যাপক মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনা শোনা মাত্রই আমরা পুরো প্রক্টরিয়াল বডি সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করি। এ মুহূর্তে পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আছে।
“শিক্ষক সমিতির সভাপতি বিষয়টি সুরাহা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র অধ্যাপকের সিদ্ধান্ত সবার মেনে নেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। এ ঘটনায় পূর্বাপর বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা নিবে।”
ঘটনা তদন্তে ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মো. মোশাররাফ হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।