Published : 09 Oct 2022, 12:46 AM
নোটিস ছাড়াই পূজার বন্ধের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আব্দুর রাজ্জাক খানের কক্ষে তালা দিয়েছে কলা অনুষদ।
এ ঘটনাকে ‘চর দখলের’ সঙ্গে তুলনা করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওই শিক্ষক। তবে কলা অনুষদের ডিনের ভাষ্য, ‘স্পেস বরাদ্দ কমিটি’র সভার সিদ্ধান্তে এ কাজ করা হয়েছে। বিষয়টি ‘ইন্টেনশনালি’ করা হয়নি।
শনিবার কলা অনুষদের লেকচার থিয়েটার ভবনে বরাদ্দ করা কক্ষে গিয়ে আব্দুর রাজ্জাক দেখেন তার তালাবদ্ধ কক্ষে আরও একটি তালা ঝুলছে। পাশে লেখা ‘স্পেস বরাদ্দ কমিটির ২১/০৭/ ২০২২ তারিখের সিদ্ধান্ত অনুসারে কলা অনুষদের জন্য সংরক্ষিত কক্ষ’।
এ বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এই বন্ধের মধ্যে কখন তালা দিয়েছে আমি জানি না। আজকে জরুরি কাজে গিয়ে দেখি, রুমে তালা। আমাদের বিভাগের আরও তিন শিক্ষকের রুম রয়েছে সেখানে, শুধু আমার রুমেই তালা দেওয়া হয়েছে।
“আমি জানি না, আমাকে টার্গেট করে করা হয়েছে কি না? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত একটি জায়গায়, যেখানে শিক্ষকের নেমপ্লেট আছে, তাকে ন্যূনতমভাবে অবহিত না করে এই কাজ কারা করল? এটা আমার কাছে চর দখলের মতো মনে হয়েছে। উনারা তো আমাকে বলতে পারত, তাহলে আমি অন্য জায়গায় দেখতাম।”
এ বিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক আবুল মনসুর আহাম্মদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এভাবে কোনো শিক্ষকের রুম তালা দেওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। এই রুমগুলো আমাদের বিভাগের জন্য পূর্ব থেকেই নির্ধারিত। হঠাৎ করে এভাবে কোনো নোটিস ছাড়া এটা করতে পারেন না তারা।”
জানতে চাইলে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবদুল বাছির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ যখন কলা অনুষদের ভবন থেকে নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরিত হয়, তখন ওই অনুষদের শিক্ষকদের ব্যবহৃত ৮৮টি কক্ষ হস্তান্তর করা হয়নি।
গত ২১ অগাস্ট উপ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সামাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্পেস বরাদ্দ কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ৮৮টি কক্ষের মধ্যে ৬৫টি কলা অনুষদে হস্তান্তর করা হবে এবং ২৩টি কক্ষ সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকরাই ব্যবহার করবে। ওই ৬৫টির মধ্যে ড. আব্দুর রাজ্জাকের কক্ষটিও রয়েছে।
অধ্যাপক বাছির বলেন, “উনার রুমের সামনে নোটিস আছে। বিষয়টা ইন্টেনশনালি করা হয়নি। উনাকে অবগত করার কথা সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিনের। যেহেতু ড. আব্দুর রাজ্জাক ওই অনুষদেরই টিচার।
“তারপরও আমি মনে করি, যেহেতু আমাদের সহকর্মী, উনার যদি রুম না থাকে- আমরা মাননীয় প্রো উপাচার্যকে (প্রশাসন) অবহিত করব। উনাকে অলরেডি আমরা চাবি দিয়ে দিয়েছি। আমরা বলেছি, কোনো ভুল বুঝাবুঝি হলে আমরা শুধরে নেব।”
তবে আব্দুর রাজ্জাকের দাবি, তাকে চাবি দেওয়া হয়নি এবং যে কাজের জন্য গিয়েছেন তাও করতে পারেননি।
এ বিষয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক জিয়া রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মিটিংয়ে এরকম কোনো ডিসিশন হয় নাই যে, রুমে তালা মেরে দেবে। এটা খুবই অপ্রত্যাশিত ও বিব্রতকর।
“আমরা রুম হস্তান্তরের একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। আমরা যদি রুম বুঝিয়ে দিতে না পারতাম, তাহলে তারা ভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারত। এভাবে রুমে তালা মেরে দেওয়া ঠিক হয়নি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য( প্রশাসন) ও স্পেস কমিটির সভাপতি ড. মুহাম্মদ সামাদ এবিষয়ে বলেন, ‘কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সরবরাহ করা কক্ষের তালিকার ভিত্তিতে স্পেস কমিটির সিদ্ধান্ত ছিল যে, যাদের নেইমপ্লেট আছে, সেসব সম্মানিত শিক্ষকের নামে এবং যেসব কক্ষে নেইমপ্লেট নেই সেসব কক্ষের দরজায় সাত দিন সময় দিয়ে চিঠি দিতে হবে।
“কেউ যোগাযোগ না করলে তারপর তালা লাগানোর প্রশ্ন আসবে। স্ব-স্ব অনুষদে এ জন্যে কমিটিও করা হয়েছে। কিন্তু প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে তালা লাগালে তো অভিযোগ উঠবেই। আমি আবার সভা করে ব্যবস্থা নেব। আপাতত দুজন ডিনকে নিজেদের বসে আলোচনা করে সমস্যা সমাধান করতে বলেছি।”