Published : 10 Jul 2025, 10:14 PM
সারাদেশে গতবারের তুলনায় এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল এমনিতেই খারাপ হয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি খারাপ হয়েছে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে।
সেখানে পাসের হার মাত্র ৫৬.৩৮ শতাংশ; যেখানে সারাদেশের পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। গত ১৫ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে কম সংখ্যক শিক্ষার্থী পাস করেছে।
ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে বোর্ড চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দাবি করছেন, গণিত ও ইংরেজিতে খারাপ করায় পাশের হার কমেছে।
এ ছাড়া সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, পরীক্ষায় অসৎ উপায় অবলম্বন করতে না পারায় এবং খাতা দেখায় শিক্ষকরা আন্তরিক ছিলেন।
তবে শিক্ষকদের মন্তব্য, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা পড়াশুনার চেয়ে অন্যদিকে নজর বেশি দিয়েছে। তাই ফলাফল খারাপ করেছে। যারা পড়াশুনা করেছে, তারা ভাল করেছে।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে এ বছর পাশের হার ৫৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। ২০২৩ সালে পাশের হার ছিল ৯০ দশমিক ১৮ এবং ২০২৪ সালে ছিল ৮৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। গত দুই বছরের চেয়ে এ বছর পাশের হার যথাক্রমে ৩৩ দশমিক ০৮ ও ৩ দশমিক ৭৫ ভাগ কম।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জি এম শহীদুল ইসলাম বলেন, সরকারের নির্দেশনায় শিক্ষার গুণগত মান নির্ণয় করার জন্য কঠোরভাবে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। যার কারণে কোনো অসদুপায় অবলম্বন করতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া শিক্ষার প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য পরীক্ষার খাতা দেখতে শিক্ষকরা বেশ আন্তরিক ছিলেন। আগের মত ছাড় দেননি। এতে ফলাফল একটু খারাপ হয়েছে।
পিরোজপুরের জুজখোলা সম্মিলিত বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বছর কেউ পাস করেনি। পাঁচজন পরীক্ষা দিয়ে পাঁচজনই ফেল করেছে।
সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিপুল মিত্র বলেন, “কারিকুলাম পাল্টে গেছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীরা পাঠদানে মনোযোগী হয়নি। এ কারণে ফলাফল খারাপ হয়েছে।”
তজুমদ্দিন উপজেলার একাডেমিক সুপার ভাইজার মো. সোহেল রানা বলেন, বিগত কয়েক বছরের চেয়ে এবার পরীক্ষা একটু ব্যতিক্রম হয়েছে। গণিত ও ইংরেজিতে গ্রাম পর্যায়ে ভালো ও দক্ষ শিক্ষকের অভাব রয়েছে। এজন্য গনিত ও ইংরেজিতে খারাপ ফল হয়েছে। শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
বরিশাল নগরীর একটি প্রতিষ্ঠানের ইংরেজি শিক্ষক মো. সালাহউদ্দিন বলেন, “শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ইংরেজি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেয় না। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইংরেজি সাহিত্য ভিত্তিক পাঠদানের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। আগে যেমন পরীক্ষার সময়সহ খাতা দেখায় যে ছাড় দেয়া হত এ বছর তেমন ছাড় দেওয়া হয়নি। যে প্রশ্ন এসেছে, তা কঠিন ছিল না। যারা পড়াশোনা করেছে, তারা ঠিক পাশ করেছে।
সদর উপজেলার কাগাশুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত গণিত শিক্ষক দ্বীপশংকর গুপ্ত বলেন, এ বছরের পরীক্ষায় কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া দেশের পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগী ছিল না। তারা ভেবেছিল আগের মত ছাড় পাবে। তা না হওয়ায় তারা খারাপ করেছে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে প্রকৃত শিক্ষকের অভাব রয়েছে। শিক্ষকরা এখন বাণিজ্যিক হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের শেখানোয় তাদের কোনো আগ্রহ নেই। বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে গণিত ও ইংরেজির দক্ষ শিক্ষকের অভাব রয়েছে।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ইউনুস আলী সিদ্দিকী বলেন, নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা গ্রহণ ও খাতা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করায় প্রকৃত ফলাফল এসেছে। যার প্রতিফলন এইচএসসি পরীক্ষায় পড়েছে। শিক্ষার্থীদের মাঝে এতটুকু উপলব্ধি হয়েছে তাদের পড়াশুনা করতে হবে।
দক্ষ শিক্ষকের অভাব রয়েছে বিষয়টি স্বীকার করে চেয়ারম্যান বলেন, অনেক অভিভাবক বিষয়টি সাধুবাদ জানিয়েছে। তাদের দাবি সন্তান ফেল করুক। কিন্তু তারা টেবিলে ফিরে আসুক।