Published : 10 Jul 2025, 04:18 PM
নতুন প্রজাতির উড়ুক্কু সরীসৃপের খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা, যেটি ২০ কোটি বছরেরও বেশি সময় আগে ডাইনোসরদের ওপর দিয়ে আকাশে উড়ত বলে দাবি তাদের।
২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় ‘টেরোসর’ নামের প্রাচীন এই সরীসৃপের চোয়ালের হাড় খুঁজে পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। তবে এখন আধুনিক স্ক্যানিং প্রযুক্তির মাধ্যমে তারা জানতে পেরেছেন, বিজ্ঞানের খাতায় একেবারেই নতুন এই প্রজাতিটি।
ওয়াশিংটন ডিসি’র ‘স্মিথসোনিয়ান ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ ন্যাচরাল হিস্ট্রি’র বিজ্ঞানীদের নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষক দলটি এ প্রাণীটির নাম রেখেছেন ‘ইওটেফ্রাড্যাকটিলাস ম্যাকইনটায়রি’, যার অর্থ ‘ছাই ডানাওয়ালা ভোরের দেবী’।
নামটি রাখা হয়েছে আগ্নেয় ছাইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে, যা প্রাচীন এক নদীর তলদেশে এ প্রাণীটির হাড় সংরক্ষণে সহায়তা করেছিল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
গবেষণাপত্রটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস’ জার্নাল-এ।
প্রায় ২০ কোটি ৯০ লাখ বছর পুরানো এ টেরোসরটি এখন পর্যন্ত উত্তর আমেরিকায় আবিষ্কৃত সবচেয়ে প্রাচীন টেরোসর বলে অনুমান বিজ্ঞানীদের।
গবেষক বেন ক্লিগম্যান বলেছেন, “ট্রায়াসিক যুগের টেরোসরের হাড় ছোট, পাতলা ও বেশিরভাগ সময়ই ফাঁপা হয়। ফলে এগুলো জীবাশ্ম হওয়ার আগেই নষ্ট হয়ে যায়।”
এ আবিষ্কারের স্থানটি হচ্ছে ‘পেট্রিফাইড ফরেস্ট ন্যাশনাল পার্ক’-এর একটি জীবাশ্ম স্তর, যা প্রাচীন পাথরের মরুভূমির মতো অঞ্চলে অবস্থিত।
২০ কোটিরও বেশি বছর আগে এ স্থানটি ছিল নদীর তলদেশ, যেখানে ধীরে ধীরে বালি ও মাটির স্তর জমে হাড়, আঁশ ও সেই সময়ের প্রাণের অন্যান্য প্রমাণ বা আলামত ধরে রেখেছিল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
নদীটি সেই সময়ের প্যানজিয়া মহাদেশের অঞ্চল দিয়ে বয়ে যেত। ওই সময় পৃথিবীর সব স্থলভাগ বা মহাদেশগুলো একসঙ্গে ছিল, যাকে বলা হয় প্যানজিয়া।
গবেষকরা বলছেন, টেরোসরের চোয়ালটি ওই স্থানে পাওয়া জীবাশ্মের একটি অংশ কেবল; সেইসঙ্গে আরও মিলেছে হাড়, দাঁত, মাছের আঁশ ও জীবাশ্মিত মল, যা কোপ্রোলাইট নামেও পরিচিত।
গবেষক ক্লিগম্যান বলেন, “এই প্রাচীন নদীর পলি থেকে টেরোসরের হাড় চিনতে পারার থেকে ইঙ্গিত মেলে, পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গাজুড়ে ট্রায়াসিক যুগের অন্যান্য পলি স্তরেও টেরোসরের হাড় থাকতে পারে।”
টেরোসরের এসব দাঁত গবেষণা করেও জানা গিয়েছে সামুদ্রিক মাছের মতো আকারের এই ডানাওয়ালা সরীসৃপটি কী ধরনের খাবার খেত।
ক্লিগম্যান বলেছেন, “এদের দাঁতের ডগায় অস্বাভাবিক মাত্রার ক্ষয় রয়েছে, যা থেকে ইঙ্গিত মেলে, এ টেরোসরটি শক্ত দেহওয়ালা কোনো প্রাণী খাচ্ছিল।”
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এ আবিষ্কারের স্থানটি জীববৈচিত্র্যের এক ‘ঝলক’ সংরক্ষণ করে রেখেছে, যেখানে এখন বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণীদের দল বিশেষ করে বিশাল উভচর প্রাণী ও প্রাচীন খোলসওয়ালা কুমিরের আত্মীয়রা একসঙ্গে বসবাস করত আমাদের চেনা কিছু প্রাণী ব্যাঙ ও কচ্ছপের সঙ্গে।
ক্লিগম্যান বলেছেন, এ জীবাশ্ম স্তরটি প্রায় ২০ কোটি বছর আগের এক বিবর্তনীয় ‘পরিবর্তনের’ প্রমাণ ধরে রেখেছে।
“এ ধরনের জীবাশ্ম স্তর আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, এসব প্রাণী একসঙ্গে একই পরিবেশে এক সময় বসবাস করত।”