Published : 10 Jul 2025, 05:08 PM
চীনের তিব্বত অঞ্চলে হিমবাহের পৃষ্ঠে জমা হওয়া গলিত পানির বিশাল হ্রদ উপচে নেপালের ভোটে কোশি নদীতে আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হয়েছে, একটি আঞ্চলিক জলবায়ু পর্যবেক্ষণ সংস্থা এমনটি জানিয়েছে।
ওই বন্যায় অন্তত নয়জনের মৃত্যু হয়েছে এবং দুই ডজনেরও বেশি মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন, জানিয়েছে রয়টার্স।
মঙ্গলবার নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডু থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার উত্তরে চীনের সহায়তায় নির্মিত একটি অভ্যন্তরীণ কন্টেইনারের ডিপোর ছয় চীনা কর্মীসহ অন্তত ১৯ জন নিখোঁজ হন। বন্যার পানির তোড়ে নেপাল ও চীনকে যুক্ত করা ‘ফ্রেন্ডশীপ সেতুটিও’ ভেসে যায়।
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, পর্বতময় ওই সীমান্ত অঞ্চলের চীনের পাশ থেকে আরও ১১ জন নিখোঁজ হয়েছেন।
বুধবার কাঠমাণ্ডু-ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেইন ডেভেলপমেন্ট (আইসিআইএমওডি) স্যাটেলাইট ছবির ভিত্তিতে জানিয়েছে, নেপালের লাংটাং হিমাল পর্বতশ্রেণীর উত্তরে ওই হিমবাহ হ্রদ উপচে নেমে আসা পানি থেকে আকস্মিক বন্যার উৎপত্তি হয়েছে।
আইসিআইএমওডির হিমবাহ বিশেষজ্ঞ ও রিমোট সেন্সিং বিশ্লেষক সুদন মহার্জন রয়টার্সকে বলেন, “প্রাপ্ত স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করে প্রাথমিকভাবে এ ধারণা পাওয়া গেছে।”
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, হিমবাহের পৃষ্ঠে একটি বিশাল হিমবাহ হ্রদ তৈরি হয়েছে, বিশেষকরে ধ্বংসাবশেষ দিয়ে ঢাকা এলাকাগুলেতে। এগুলো সাধারণত হিমবাহের বরফ গলে তৈরি হওয়া ছোট ছোট পুকুর দিয়ে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে বড় হয় এবং একটার সঙ্গে আরেকটা মিলে একসময় বিশাল হিমবাহ হ্রদে পরিণত হয়।
আইসিআইএমওডির আরেক কর্মকর্তা শাশ্বত সান্যাল জানান, হিন্দুকুশ ও হিমালয় পর্বতমালায় এ ধরনের ঘটনা ‘নজিরবিহীনভাবে’ বাড়ছে আর এর প্রভাব পড়ছে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, নেপাল চীন, ভুটান, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলগুলোতে।
তিনি বলেন, “যেসব কারণে এই ক্রমবর্ধমান প্রভাবগুলো তৈরি হচ্ছে আমাদের তার গভীরে যাওয়া দরকার।”
জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলা বর্ষাকালে পর্বতময় নেপালে ব্যাপক বন্যা ও ভূমিধসের মতো ঘটনা ঘটে। দেশটির কর্মকর্তারা ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট আবহাওয়ার চরম ধরন, অসামঞ্জস্যপূর্ণ বৃষ্টিপাত, আকস্মিক বন্যা, ভূমিধস ও হিমবাহ হ্রদ উপচে তৈরি হওয়া হড়কা বানের কারণে নেপাল দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
চলতি বছর নেপালে সময়ের আগেই বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে এর প্রাণঘাতী প্রভাব দেখা যাচ্ছে। ২৯ মে থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে আবহাওয়াজনিত বিভিন্ন ঘটনায় অন্তত ৩৮ জন নিহত অথবা নিখোঁজ রয়েছেন বলে নেপালের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রিলিফ, রিডাকশন এন্ড ম্যানেজমেন্ট কর্তৃপক্ষের তথ্যে দেখা গেছে।