Published : 07 Nov 2024, 01:51 AM
একাধিক ফৌজদারি এবং দেওয়ানি মামলা মাথায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন রিপাবলিকান ডনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনিই হতে চলেছেন ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়া প্রথম প্রেসিডেন্ট।
নিউ ইয়র্কের আদালতে ঘুষ কেলেঙ্কারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে ট্রাম্প সাজার রায়ের অপেক্ষায় ছিলেন। এমনকি মার্কিন ফেডারেল আইনেও একাধিক ফৌজদারি অভিযোগের মুখে আছেন তিনি।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলাগুলোর পরিণতি এখন কী হবে?
সিএনএন এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প বহুবারই বলে এসেছেন তিনি বিশেষ কাউন্সেল জ্যাক স্মিথকে বরখাস্ত করবেন। এর মাধ্যমে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টা এবং গোপন নথি অব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত মামলার অবসান ঘটাবেন তিনি।
জ্যাক স্মিথ গতবছর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের নির্বাচন নিয়ে ফৌজদারি মামলা করেছিলেন। এরপর জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে জানায়, বিচার থেকে ট্রাম্পের কিছু ছাড় আছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসাবে তার সাংবিধানিক ক্ষমতার মধ্যে থেকে কোনও কিছু করে থাকলে সেক্ষেত্রে তার বিচার করা যাবে না। তবে ব্যক্তিগত কোনও কৃতকর্মের জন্য তার বিচার করা যেতে পারে।
ওই রায়ের পর থেকে মামলাটি একটি আইনি অচলবস্থার মধ্যে রয়েছে। স্মিথ যুক্তি দেখিয়ে বলেছিলেন, ট্রাম্পের নির্বাচনি ফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টা তার প্রেসিডেন্টের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।
কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ট্রাম্প বিচারে ছাড় পেয়ে গেছেন বলেই মনে করেন। তারপরও ট্রাম্প বলেছেন, জ্যাক স্মিথকে ২ সেকেন্ডেই বরখাস্ত করবেন তিনি।
নিউ ইয়র্কে ঘুষ মামলায় সাজা:
২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে ট্রাম্প তার শারীরিক সম্পর্কের ব্যাপারে মুখ বন্ধ রাখতে ড্যানিয়েলসকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দেওয়া এবং বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ব্যবসায়িক রেকর্ড নিয়ে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার ৩৪ টি অভিযোগ রয়েছে।
এসব অভিযোগে নিউ ইয়র্কে ম্যানহাটনের আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন ট্রাম্প। আগামী ২৬ নভেম্বর ওই আদালতে তার বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে সিএনএন।
সেই সাজা এখন হবে কিনা সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ।বিচারক জুয়ান মারচান নিজেই ১২ নভেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন এই সাজা বাতিল করা হবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে। কারণ, ট্রাম্পকে কিছু প্রেসিডেন্সিয়াল ছাড় দিয়ে জুলাইয়েই রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
বিচারক মার্চান এখন সাজা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিলে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ খারিজ হয়ে যাবে এবং ট্রাম্প সাজা থেকে মুক্তি পাবেন। কিন্তু বিচারক মারচান যদি সাজা বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে ট্রাম্পের আইনজীবীরা সম্ভবত সাজার রায় ঘোষণার তারিখ পিছিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানা্বেন, যাতে তারা এর বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেন।
মার্চান যদি সাজা ঘোষণার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেন, তবে ট্রাম্পকে চার বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হতে পারে। তবে বিচারক যদি মনে করেন নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে কারাগারে সাজা দেওয়ার প্রয়োজন নেই, তাহলে তিনি প্রবেশন বা জরিমানার মতো কম সাজা ঘোষণা করতে পারেন।
ওয়াশিংটন ডিসি ও ফ্লোরিডায় ফেডারেল মামলা:
বিশেষ কাউন্সেল জ্যাক স্মিথ ২০২৩ সালে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এই দুটো মামলা করার পর থেকেই ট্রাম্প সেগুলোর বিচারে কালক্ষেপণ করার চেষ্টা করে আসছেন। যাতে নিরবাচিত হওয়ার পর তিনি স্মিথকে বরখাস্ত করতে পারেন এবং এর মধ্য দিয়ে মামলা দুটো খারিজ করতে পারেন। অক্টোবেরের শেষ দিকে ট্রাম্প বলেছিলেন, এমন পদক্ষেপ নির্দ্বিধায় নেবেন তিনি।
জর্জিয়া রিকো মামলা:
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের নির্বাচনের সময় জর্জিয়া রাজ্যে নির্বাচনের ফল পাল্টানোর চেষ্টার অপরাধে জড়িত থাকার ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়। তার বিরুদ্ধে আনা ১৩টি আনুষ্ঠানিক অভিযোগের মধ্যে রয়েছে ভয়ভীতি দেখানোর বিরুদ্ধে জর্জিয়ার গুণ্ডামি-বিরোধী র্যাকেটিয়ারিং আইন লঙ্ঘন, সরকারি কর্মকর্তার শপথ লঙ্ঘন এবং জালিয়াতির ষড়যন্ত্র।
জর্জিয়ার দুর্নীতি ও সংঘবদ্ধ অপরাধ-বিরোধী আইন র্যাকেটিয়ারিং ইনফ্লুয়েন্সড অ্যান্ড করাপ্ট অর্গানাইজেশনস (রিকো) অ্যাক্টের অধীনে করা এই মামলার প্রধান সরকারি কৌঁসুলি জর্জিয়ার ফুলটন কাউন্টির অ্যাটর্নি জেনারেল ফ্যানি উইলিস। তার ওপরই ঝূলে আছে এ মামলার ভাগ্য।
যদিও ডেমোক্র্যাট ফ্যানি উইলিস তার সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্কের কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে এই মামলার বিচারে অযোগ্য ঘোষিত হয়েছেন। তারপরও তাকে যদি ট্রাম্পের বিচার করতে দেওয়া হয় তাহলে তা করা নিশ্চিতভাবেই সম্ভব হবে না। কারণ, ট্রাম্প এখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে গেছেন।
দেওয়ানি মামলা:
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় ভূমিকা থাকার অভিযোগ আছে। এছাড়াও আছে দুটি ই. জিন ক্যারল মামলা। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছিলেন সাবেক কলামনিস্ট ই. জিন ক্যারল।
নিউ ইয়র্ক অ্যাটর্নি জেনারেলের সিভিল ফ্রড মামলাও আছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। এ মামলায় তার জরিমানাও ধার্য হয়েছে। ক্যারোলের মামলায়ও ট্রাম্পের জরিমানা হয়েছে। তিনি মামলা খারিজের আপিল করলেও আদালতের সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।
ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউজে থাকার সময়েও এই মামলাগুলো চলতে থাকতে পারে- তেমন সম্ভাবনা আছে।