Published : 10 Jul 2025, 11:44 AM
ব্রাজিলীয় পণ্যে ‘রিসিপ্রোকল’ শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে তামা আমদানির ওপরও ৫০ শতাংশ মাসুল আরোপ করেছেন তিনি। উভয় সিদ্ধান্তই ১ অগাস্ট থেকে কার্যকর হবে।
রয়টার্স জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে তার শুল্ক আক্রমণের চাপ আরও বাড়ানোর এসব সিদ্ধান্ত বুধবার ঘোষণা করেছেন তিনি।
বার্তা সংস্থাটি লিখেছে, ব্রাজিলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক ভারসাম্যপূর্ণ, তারপরও দেশটির ওপর ট্রাম্প যে মাত্রার পারস্পরিক শুল্ক চাপিয়েছেন তা আশ্চর্যরকম বেশি।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুয়িজ ইনাসিও লুলা দা সিলভাকে পাঠানো এক চিঠিতে ট্রাম্পের শুল্ক আদেশটির বিষয়ে জানানো হয়। ওই চিঠিতে ব্রাজিলের সাবেক ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো বিচারের বিষয়ে রাগ ঝাড়েন ট্রাম্প। বোলসোনারের বিরুদ্ধে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভিত্তিহীন অভিযোগ’ আনা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এর মাধ্যমে তিনি লুলার সঙ্গে ক্রমবর্ধমান তিক্ত বিরোধকে আরও বাড়িয়ে তুলছেন বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা।
ব্রাজিল মুক্ত নির্বাচন ও আমেরিকার বাক স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ট্রাম্প। মার্কিন সামাজিক মাধ্যমগুলোর ওপর ব্রাজিল ‘গোপন’ ও ‘বেআইনি’ সেন্সরশিপের নির্দেশ দিয়েছে অভিযোগ করে এর সমালোচনা করেছেন তিনি।
“ব্রাজিল মার্কিন কোম্পানিগুলোর ডিজিটাল বাণিজ্য কার্যক্রমের উপর অব্যাহত আক্রমণ চালাচ্ছে,” এমন মন্তব্য করে তিনি মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরকে একটি নতুন ‘৩০১ ধারার’ অন্যায্য বাণিজ্য অনুশীলন বিষয়ক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন যা এমনকি আরও শুল্ক যোগ করতে পারে।
লুলা একটি বিবৃতি দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের চিঠির জবাব দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, শুল্ক বৃদ্ধির যে কোনো একতরফা পদক্ষেপের ক্ষেত্রে ব্রাজিলের আইন অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।
বর্তমানে কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্সের সঙ্গে আছেন এমন এক সাবেক মার্কিন বাণিজ্য কর্মকর্তা ব্র্যাড সেটসার জানান, ট্রাম্পের এ পদক্ষেপে এই দুই গণতান্ত্রিক দেশের মধ্যে সহজেই একটি ক্ষতিকর বাণিজ্য যুদ্ধ পাকিয়ে উঠতে পারে।
তিনি বলেন, “এটি এক ব্যক্তির একতরফা নিয়ন্ত্রণে থাকা শুল্কের বিপদকে তুলে ধরে। এটি এই সত্যের সঙ্গে সম্পর্কিত যে লুলা ট্রাম্পের বন্ধু বোলসোনারোকে নির্বাচনে পরাজিত করেছিলেন।”
যুক্তরাষ্ট্রের ১৫তম বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার ব্রাজিল। ২০২৪ সালে দুই দেশের পারস্পরিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল নয় হাজার ২০০ কোটি ডলার যেখানে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ছিল।
ব্রাজিলে রপ্তানি করা যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান পণ্যগুলো হল আকাশযান, পেট্রলিয়াম পণ্য ও অপরিশোধিত তেল, কয়লা ও সেমিকন্ডাক্টর। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা ব্রাজিলের প্রধান পণ্যগুলো হল অপরিশোধিত তেল, কফি, আধা প্রস্তুতকৃত ইস্পাত ও পিগ আয়রন।
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল ডিজিটাল পরিষেবা কর বাস্তবায়ন বন্ধ রেখেছে, কিন্তু ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলিতে শক্তিশালী প্রতিযোগিতামূলক বিধিমালা আরোপের মাধ্যমে আইন প্রণয়ণ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে।
ব্রাজিলের ওপর ‘রিসিপ্রকোল’ বা পারস্পরিক শুল্ক বৃদ্ধির কথা জানানোর কয়েক ঘণ্টা পর ট্রাম্প তার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে বলেন, “একটি শক্তিশালী জাতীয় নিরাপত্তা মূল্যায়নের পর আমি কপারের (তামা) ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিচ্ছি, এটি ১ অগাস্ট, ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে।”