Published : 03 Jul 2025, 01:27 PM
সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করছে জানিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেছেন, এ ধরনের উদ্যোগে তারা অনুপ্রাণিত হচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের নবম দিনের সূচনা বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আলী রীয়াজ বলেন, “শুধু এখানে নয়, আমরা এটা জানি- আপনারা দলগতভাবে, জোটগতভাবে পরস্পরের মধ্যেও বিভিন্ন রকম আলাপ-আলোচনা করছেন; যেটা ইতিবাচক। কারণ এখানে বসে আলোচনার মাধ্যমে সবকিছুর সিদ্ধান্ত নিতে পারব না।
“আমরা দলগুলোকে অনুরোধ করেছিলাম আপনারা সমমনা দল, সংগঠন, জোটের সঙ্গে কথা বলুন। আমরা কিছু অনানুষ্ঠানিক খবর পাচ্ছি; যাতে অনুপ্রাণিত হচ্ছি।”
তিনি বলেন, “সংস্কার নিয়ে গত ৫৩ বছরে আলোচনার সুযোগ হয়নি। সেই সুযোগ- অত্যন্ত কষ্টের মধ্য দিয়ে, অনেক রকম প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে, সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, আত্মদানের মধ্য দিয়ে এখানে এসেছি। আলোচনার ইতিবাচক দিক আছে পরস্পরকে জানা বোঝার দিক থেকে।”
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে যেসব সংস্কার সুপারিশ নিয়ে ঐকমত্য হয়নি, সেই সব বিষয় নিয়ে গত ১৭ জুন থেকে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শুরু হয়েছে।
আলী রীয়াজ বলেন, প্রথম ধাপের সংলাপে মৌলিক কিছু বিষয়ে মতানৈক্য ছিল।
“তার বাইরেও আমাদের হিসাব মতে, প্রায় ২০টির মত বিষয় আছে- যেগুলো নিয়ে আমাদের কথা বলতে হবে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। যেগুলোকে আমরা মনে করছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষেত্রে বিশেষে যেগুলোকে মৌলিক বিষয় হিসেবে বিবেচনা করি।”
দ্বিতীয় ধাপের সংলাপে হওয়া আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা প্রতিদিনই বিভিন্ন বিষয়ের প্রাথমিক আলোচনার জায়গাগুলো উপস্থাপন করছি। সেজন্য অনেক সময় আপনাদের কাছে মনে হবে যে- গতকালের অসম্পূর্ণ আলোচনা কেন আজকে আবার শুরু করছি না। এর একটা অন্যতম কারণ হচ্ছে, এই যে প্রাথমিক প্রক্রিয়ার আলোচনায় দলগত অবস্থানগুলো বুঝতে পারি; অন্যদের যুক্তিগুলো বুঝতে পারি।
“সেই যুক্তিগুলো নিয়ে যেন দলের অভ্যন্তরে এবং জোটে সহযোগী সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন; সে সুযোগটা আমরা রাখতে চাচ্ছি। পরবর্তী পর্যায়ে দেখা যাবে- যেগুলো নিয়ে আমরা সহজে এক জায়গায় সিদ্ধান্তের দিকে অগ্রসর হতে পারব। সেই কারণে আমরা এখন যে সমস্ত বিষয় অমীমাংসিত থেকে গেছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করছি।”
আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান পরিবর্তন হচ্ছে জানিয়ে অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, “আমাদের আলোচনার ক্ষেত্রে সেটাও আমরা বিবেচনায় রাখছি, আমাদের সঙ্গেই আছে। তার পরেও মনে হয়েছে, আলোচনায় আপনাদের অবস্থান আরও জোরদার হবে। অবস্থান নিয়ে যুক্তি প্রদর্শন করতে পারবেন। সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করছি।”
রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন, বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণার প্রস্তাব নিয়ে বৃহস্পতিবার আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানান ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি রীয়াজ।
তিনি বলেন, “আজকে তিনটি বিষয় আলোচনা করতে পারব। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যদি একমত হন, তাহলে কোনো একটা বিষয় সিদ্ধান্ত নিতে পারব। আমরা একটা সিদ্ধান্তের জায়গায় আসতে পারলে, সেটা হবে সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক।
“দিনের শেষে আমরা সকলেই শুধুমাত্র আলোচনার মধ্য দিয়ে যে যতটা সমৃদ্ধ হতে পারব, বাইরেও যেন তার সাফল্য নিয়ে দিনটা শেষ করতে পারি। সেজন্যই আমাদের চেষ্টা থাকবে।"
অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দ, আপনাদের কর্মীরা যেভাবে লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাদেরকে এখানে প্রস্তুত করেছেন; তাদের আমরা প্রতিদিনই স্মরণ করি। তাদের জীবন বাজিয়ে রাখার সংগ্রামের পরিণতির কারণে আমরা এখানে এসেছি।
“সেটা আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে এবং সেটাই যেন আমাদের গাইডিং প্রিন্সিপাল হয়, সেটাই যেন আমাদের নির্দেশক হয়।
“অনেক প্রাণের বিনিময়ে, অনেক অত্যাচার নিপীড়নের মোকাবেলা করে এবার একটা সম্ভাবনার জায়গায়, সুযোগের জায়গায়- যে সুযোগ অতীতে আসেনি, সেখানে আমরা এসেছি, এই সুযোগ হেলায় হারানো যাবে না। এই সুযোগে আমাদের যতটুকু সম্ভব প্রত্যেককে ব্যক্তি হিসেবে, দল হিসেবে, জোট হিসেবে, নাগরিক হিসেবে সে ভূমিকা রাখতে হবে।”