Published : 20 Oct 2022, 12:44 PM
কব্জির জাদুতে ব্যাটসম্যানদের বোকা বানানো তার নিত্যকর্ম। এর সঙ্গে রয়েছে শেষ দিকে নেমে মারকুটে ব্যাটিং। ফিল্ডিংয়েও সদা তৎপর শ্রীলঙ্কার তারকা অলরাউন্ডার ভানিন্দু হাসারাঙ্গা। সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জন্য দুর্দান্ত এক প্যাকেজ তিনি।
বোলিংয়ে সাফল্য পাচ্ছেন বেশি। স্বাভাবিকভাবেই সবাই তাকে দেখেন বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবেই। এর বাইরে নন সতীর্থরাও।
“কেউ যদি ওর বোলিং ধরতে না পারে, তাহলে ও নিশ্চিত (ব্যাটসম্যানকে) চেপে ধরবে,” হাসারাঙ্গার ব্যাপারে এভাবেই নিজের মূল্যায়ন জানালেন শ্রীলঙ্কার বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ভানুকা রাজাপাকসে। মূলত লেগ স্পিন দিয়েই নিজেকে সময়ের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হাসারাঙ্গার নজর এখন আরও ওপরে।
জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক ২০১৭ সালে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে করেছিলেন হ্যাটট্রিক। টি-টোয়েন্টি সংস্করণে যাত্রা শুরুর জন্য ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে হাসারাঙ্গাকে। এরপর এই সংস্করণে শুধু শ্রীলঙ্কাই নয়, বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন হাসারাঙ্গা।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেকের পর থেকে হাসারাঙ্গার (৭৫) চেয়ে বেশি উইকেট শিকার করতে পারেনি বিশ্বের আর কোনো বোলার। সবশেষ দুটি বড় আসর- ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও চলতি বছরের এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার সেরা পারফরমার ছিলেন তিনি।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে হওয়া এশিয়া কাপে দলের সর্বোচ্চ ৯ উইকেট নেন হাসারাঙ্গা। পাশাপাশি ৬৬ রান করে আসরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতেন তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ফাইনালে ২১ বলে ৩৬ রানের সঙ্গে বল হাতেও ৩ উইকেট নেন ২৫ বছর বয়সী এ অলরাউন্ডার।
লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকাও হাসারাঙ্গার হাতে বল তুলে দিয়ে সবসময় নির্ভার থাকেন। আইসিসি ডিজিটালের ফিচার ভিডিওতে হাসারাঙ্গাকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন শানাকা।
“হাসারাঙ্গার হাতে বল তুলে দেওয়া সবসময়ই রোমাঞ্চকর। আমি যখনই ওর হাতে বল তুলে দেই, সবসময় কাজটা করে দেয়। ও সবসময় ধারাবাহিক পারফর্মার।”
তবে অধিনায়কের চোখে বল হাতে নির্ভরতার প্রতীক হলেও, হাসারাঙ্গার দাবি ভিন্ন। তিনি এখন নিজেকে ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসেবেই ভাবছেন। সাবেক অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে ব্যাটিংয়ে বাড়তি মনোযোগ দিচ্ছেন তিনি।
“সবাই মনে করে আমি বোলিং অলরাউন্ডার। কিন্তু আমি এখন ব্যাটিং অলরাউন্ডার। ছোটবেলায় আমি অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের খেলা দেখতে পছন্দ করতাম। শ্রীলঙ্কার হয়ে অন্যতম সেরা ফিনিশার তিনি।”
গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আসরের সর্বোচ্চ ১৬ উইকেট নেন হাসারাঙ্গা। এর মধ্যে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে করা হ্যাটট্রিকও। পাশাপাশি আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ারসেরা ৭১ রানের ইনিংসসহ পাঁচ ইনিংসে ১৪৮ স্ট্রাইকরেটে করেছিলেন ১১৯ রান।
“আমি মনে করি দলের জন্য ভালো কিছু করেছি। আমি সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। বিশ্বকাপের গত আসরের পারফরম্যান্স নিয়ে আমি সত্যিই খুশি। বিশেষ করে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক! ওয়ানডে অভিষেকের ম্যাচে আমি হ্যাটট্রিক করেছিলাম। তবে এটি ছিল টি-টোয়েন্টিতে আমার প্রথম হ্যাটট্রিক এবং সেটি আমি বিশ্বকাপে করেছি। তাও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে, যারা এই ফরম্যাটে অনেক ভালো দল।”
আইসিসি টি-টোয়েন্টি অলরাউন্ডারদের র্যাঙ্কিংয়ে ১৭৬ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে বর্তমানে পাঁচ নম্বরে রয়েছেন হাসারাঙ্গা। তার লক্ষ্য চূড়া, এখন যেখানে আছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
“হ্যাঁ, আমি বিশ্বের এক নম্বর টি-টোয়েন্টি অলরাউন্ডার হতে চাই। এখন আমি চার নম্বরে (আসলে পাঁচ নম্বরে) আছি। এখান থেকে শীর্ষে উঠতে চাই।”
নিজের পারফরম্যান্সের পাশাপাশি মাঠে দায়িত্ব নেওয়া ও তরুণ উজ্জীবিত করার বিষয়টি নজর কেড়েছে শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি ও বর্তমানে জাতীয় দলের পরামর্শক মাহেলা জয়াবর্ধনের জন্য। তার মতে, শ্রীলঙ্কার উঠতি প্রজন্মের জন্য বড় অনুপ্রেরণা হবেন হাসারাঙ্গা।
“গত ২-৩ বছরে সে দলের লিডারশিপের দায়িত্বটাও নিয়েছে। মাঠে দাসুনকে সাহায্য করছে, তরুণ খেলোয়াড়দের উৎসাহ দিচ্ছে। তো সে এই শ্রীলঙ্কান দলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন। গত কয়েক বছরে সে যা অর্জন করেছে তার জন্য টুপিখোলা সম্মান। শ্রীলঙ্কার উঠতি প্রজন্মের কাছে প্যাশনের সঙ্গে দাপুটে ক্রিকেট খেলার জন্য বড় অনুপ্রেরণা হতে চলেছে সে।”