Published : 25 Jan 2024, 06:27 PM
ব্যাট-বলের লড়াই শুরু হওয়ার আগেই দারুণ এক অর্জনে নাম লেখালেন শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ। আম্পায়ার হিসেবে যখন তিনি দাঁড়ালেন গ্যাবায়, তার নাম খোদাই হয়ে গেল ইতিহাসে। টেস্ট ম্যাচে তো বটেই, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই অস্ট্রেলিয়ায় ম্যাচ পরিচালনা করা বাংলাদেশের প্রথম আম্পায়ার তিনি। দেশের বাইরে টেস্ট ম্যাচে আম্পায়ারিংয়ের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ থেকে ছিল এতদিন শুধু এনামুল হকের। ২০১২ সালে নেপিয়ারে নিউ জিল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে টেস্টে দাঁড়িয়েছিলেন সাবেক এই বাঁহাতি স্পিনার।
শরফুদ্দৌলার ইতিহাস গড়ার দিনে একটি মাইলফলক পূর্ণ করেন মিচেল স্টার্ক। দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৪ উইকেট নেওয়ার দিনে স্পর্শ করেন ৩৫০ টেস্ট উইকেট। তবে দিনটি শুধু তার নয়। স্টার্ক ও অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের ছোবল সামলে দুর্দান্ত এক জুটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে লড়াই করেন কাভেম হজ ও জশুয়া দা সিলভা। দিনের শেষ ভাগে দারুণ এক ক্যামিও খেলেন আলজারি জোসেফ।
সব মিলিয়ে ব্রিজবেনে দিন-রাতের টেস্টের প্রথম দিনে ব্যাট-বলের লড়াই হলো দারুণ। প্রথম দিন শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৮ উইকেটে ২৬৬।
প্রথম সেশনে যদিও মনে হচ্ছিল, আরও একটি একতরফা লড়াই অপেক্ষায়। ৬৪ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল ক্যারিবিয়ানরা। সেখান থেকেই লড়িয়ে ব্যাটিংয়ে ১৪৯ রানের জুটি গড়েন জশুয়া ও হজ। দিন রাতের টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যা সব জুটি মিলিয়েই সেরা।
দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নেমে ১৯৪ বলে ৭১ রানের ইনিংস খেলেন হজ। কিপার-ব্যাটসম্যান জশুয়া ৭৯ রান করেন ১৫৭ বল খেলে।
অ্যাডিলেইডে আগের টেস্টে উইকেটে অনেক মুভমেন্ট থাকলেও গ্যাবায় উইকেট দেখা যায় বেশ ব্যাটিং সহায়ক। স্রেফ বাউন্স একটু বেশি ছিল। সেই বাড়তি বাউন্সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের একের পর এক ব্যাটসম্যান আউট হন প্রথম সেশনে।
ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই বড় একটি ভুল করে বসেন আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা। ব্যাটে বেশ স্পষ্টভাবে লাগার পরও এলবিডব্লিউ দেন তিনি ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটকে। পরে আর গোটা দিনে ভুল করেননি। তার আরও দুটি সিদ্ধান্তে রিভিউ নেওয়া হলেও তা বদলায়নি।
ব্র্যাথওয়েটই বিদায় নেন আগে। প্রথম ৭ ওভারে ৯ রান তোলার পর জশ হেইজেলউডের বেশ বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে বিদায় নেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক।
তিনে নেমে বেশ আগ্রাসী শুরু করা কার্ক ম্যাকেঞ্জি ৩ চার ও ১ ছক্কায় ২১ রান করে আউট হন প্যাট কামিন্সের বলে কাট করার চেষ্টায়।
তেজনারাইন চন্দরপলকে ফেরানোর পর আলিক আথানেজের উইকেট নিয়ে স্টার্ক পা রাখেন ৩৫০ উইকেটের ঠিকানায়। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এই মাইলফলক ছোঁয়া পঞ্চম বোলার ও তৃতীয় পেসার তিনি।
এরপর জাস্টিন গ্রিভসকেও যখন বিদায় করেন স্টার্ক, ইনিংসের অর্ধেক হারিয়ে তখন ধুঁকছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আগের টেস্টের মতো তাদের ব্যাটিং ধসে পড়বে বলেই মনে হচ্ছিল।
তবে এবার হজ ও জশুয়া গড়েন দারুণ প্রতিরোধ। দুর্দান্ত টেম্পারমেন্টের প্রমাণ রেখে জুটি গড়ে তোলেন তারা। দুজনেরই ডিফেন্স ছিল আঁটসাঁট, অফ স্টাম্পের বাইরে বলের পর বল ছেড়ে দেন। সামনে বল পেলেই আবার চমৎকার সব ড্রাইভ খেলেছেন দুজনই।
আগের টেস্টে দুই ইনিংসেই শর্ট বলে আউট হওয়া জশুয়ার জন্য বারবার শর্ট বল করা হলেও এবার তিনি ফাঁদে পা দেননি। স্টার্কের শর্ট বলে হুক করে ছক্কা মারেন হজ।
দ্বিতীয় সেশনে ৭ বোলার ঘুরিয়েফিরিয়ে ব্যবহার করেও জুটি ভাঙতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক কামিন্স। প্রায় ৫২ ওভার কাটিয়ে দেওয়া জুটি শেষ পর্যন্ত থামে নতুন বল পাওয়ার একটু আগে। ন্যাথান লায়নের রাউন্ড দা উইকেটে করা ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হন জশুয়া।
দ্বিতীয় নতুন বলে আক্রমণে ফিরে স্টার্ক ভেঙে দেন হজের প্রতিরোধ। মাঠ ছাড়ার সময় গোটা গ্যালারি দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানায় ৩০ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানকে।
এরপর আলজারি জোসেফের বিনোদন। অস্ট্রেলিয়ান পেসারদের পাত্তা না দিয়ে দ্রুত রান বাড়ান তিনি। ৭ চারে ২২ বলে ৩২ রান করে দিনের শেষ ওভারে হেইজেলউডের শিকার হন তিনি।
প্রথম দিনে ৮ উইকেট নিয়ে দিনটি অস্ট্রেলিয়ারই, তবে এবার অন্তত তাদেরকে বেগ দিতে পেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা কামিন্স বল হাতে এ দিন ছিলেন বিবর্ণ। ২২ ওভার বল করেও মেইডেন নিতে পারেননি লায়ন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ৮৯.৪ ওভারে ২৬৬/৮ (ব্র্যাথওয়েট ৪, চন্দরপল ২১, ম্যাকেঞ্জি ২১, আথানেজ ৮, হজ ৭১, গ্রিভস ৬, জসুয়া ৭৯, সিনক্লেয়ার ১৬, আলজারি জোসেফ ৩২; স্টার্ক ২০-৩-৬৮-৪, হেইজেলউড ১৬.৪-৫-৩২-২, কামিন্স ১৮-০-৭০-১, লায়ন ২২-০-৬২-১, মার্শ ২-০-৩-০, গ্রিন ৭-২-১২-০, লাবুশেন ১-০-১-০, হেড ৩-০-১৪-০)।