Published : 23 Jun 2024, 12:10 PM
গুলবাদিন নাইবের হাসি থামছিলই না। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর থেকেই হাসির ফোয়ারা ছুটছিল আফগানিস্তান দলে। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে দাঁড়িয়ে ক্রমেই চওড়া থেকে আরও চওড়া হচ্ছিল নাইবের হাসি। উচ্ছ্বাসমাখা কণ্ঠে তিনি শোনালেন তৃপ্তির কথা, অর্জনের গল্প আর তুলে ধরলেন প্রথমবার অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর গৌরব-গাঁথা।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটের ম্যাচে বাংলাদেশ সময় রোববার সকালে সেন্ট ভিনসেন্টে অস্ট্রেলিয়াকে ২১ রানে হারিয়ে দেয় আফগানিস্তান। বিশ্ব ক্রিকেটের এই পরাশক্তি ও দারুণ পেশাদার এই দলটির বিপক্ষে যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানদের প্রথম জয় এটি সব সংস্করণ মিলিয়েই।
আফগানদের স্মরণীয় এই জয়ের নায়ক নাইব। চার ওভারে ২০ রান দিয়ে চারটি উইকেট শিকার করেন তিনি। শেষ দিকে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নিয়ে তিনি ফেরান অ্যাশটন অ্যাগারকে।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথমবার চার উইকেটের স্বাদ, সেটিও বিশ্বকাপের মঞ্চে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। ম্যাচ সেরা হওয়ার নাইবের কণ্ঠে ফুটে উঠল যেন গোটা আফগানিস্তানের উচ্ছ্বাস।
“প্রথমত, প্রিয় আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা। এই মুহূর্তটির জন্য আমাদের অপেক্ষা ছিল অনেক দিনের। আমার জন্য এটি দারুণ মুহূর্ত। শুধু আমার জন্য নয়, গোটা জাতির জন্য, আমাদের মানুষের জন্য অনেক বড় মুহূর্ত এটি। দেশের জন্য, আমাদের ক্রিকেটের জন্য বড় অর্জন। কিছু বলার ভাষা পাচ্ছি না আমি। তবে সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা, যারা ক্যারিয়ারজুড়ে ও আমাদের ক্রিকেটীয় ভ্রমণে সবসময় পাশে থেকেছে।”
সেন্ট ভিনসেন্টের উইকেট ছিল মন্থর ও কিছুটা অসম বাউন্সের। আফগানদের জন্য বলা যায়, দারুণ উপযোগী উইকেট! বিশেষ করে, নাইবের জেন্টল মিডিয়াম পেস বোলিংয়ের জন্য আদর্শ উইকেট। তিনিও দারুণভাবে তা কাজে লাগান।
ম্যাচ শেষে নাইব জানালেন, ব্যাটিংয়ের সময়ই বোলিংয়ে পরিকল্পনা সাজিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। তবে জয়ের কৃতিত্ব তিনি একা নিতে নারাজ।
“ব্যাটিং ইনিংসের সময় উইকেট বুঝতে পেরেছিলাম। তখনই ঠিক করেছিলাম কীভাবে বল করতে হবে এখানে। রাশিদকে ধন্যবাদ যে আমার ওপর আস্থা রেখেছে।”
“এটা পুরোপুরি দলীয় প্রচেষ্টার ফসল। রাহমানউল্লাহ, জাদরান দারুণ ব্যাট করেছে, নাভিন চমৎকার বোলিং করেছে। গত দুই মাস আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি, ফলাফল আপনাদের সামনে।”
ইব্রাহিম জাদরান ও রাহমানউল্লাহ গুরবাজের শতরানের জুটি আফগানদের এগিয়ে নেয় দেড়শ রানের পুঁজির দিকে। পরে নতুন বলে নাভিন-উল-হাক দুর্দান্ত বোলিংয়ে শিকার করেন ট্রাভিস হেড ও মিচেল মার্শের উইকেট। শেষ দিকে অ্যাশটন অ্যাগারের উইকেটও নেন এই পেসার। মোহাম্মদ নাবি, রাশিদ খানদের অবদান তো যথারীতি ছিলই।
সীমিত ওভারের ক্রিকেটের সবশেষ দুটি বিশ্ব আসরে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর সম্ভাবনা জাগিয়েছিল আফগানিস্তান। ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অ্যাডিলেইডে রাশিদ খানের বিধ্বংসী ইনিংসে দারুণ লড়াইয়ের পর শেষ পর্যন্ত ৪ হারে হেরে যায় তারা। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের হারটা তো আফগানদের জন্য ছিল আরও বেদনাদায়ক। ২৯১ রানের পুঁজি নিয়ে ৯১ রানে অস্ট্রেলিয়ার ৭ উইকেট তুলে নিয়েছিল তারা। কিন্তু মুম্বাইয়ে সেদিন গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের অতিমানবীয় এক ডাবল সেঞ্চুরিতে আর কোনো উইকেট না হারিয়েই অবিস্মরণীয় এক জয় পায় অস্ট্রেলিয়া।
সেই দুই ম্যাচের হতাশা পেছনে ফেলে এবার স্বপ্নের সেই ঠিকানা খুঁজে নিতে পেরেছে আফগানিস্তান। নাইবের আনন্দও তাই যেন বাধ মানছে না।
“থ্যাংক গড, অবশেষে আমরা অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারলাম। আফগানিস্তানের জন্য এটা বিশাল অর্জন। আমাদের ক্রিকেট ইতিহাস দীর্ঘদিনের নয়। গত ১০ বছরেই যা কিছু অর্জন করেছি। এটা অনেক বড় এক অর্জন।”
“গত বিশ্বকাপেও আমরা ভালো খেলেছি। এবারের বিশ্বকাপ নিউ জিল্যান্ডকে হারিয়েছি। অস্ট্রেলিয়ার মতো চ্যাম্পিয়ন দলকে এত বড় টুর্নামেন্টে হারালাম। এরকম দল ও এমন ম্যানেজমেন্ট পাওয়া আমাদের জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার।”
সুপার এইটে নিজেদের শেষ ম্যাচে আগামী মঙ্গলবার বাংলাদেশের বিপক্ষে লড়বে আফগানিস্তান। ওই ম্যাচে জিততে পারলে ও অন্য ম্যাচের ফল পক্ষে এলে সেমি-ফাইনালে খেলার সুযোগ থাকবে তাদের।