Published : 10 Jul 2025, 04:33 PM
চুল কাটাতে চুলচেরা ভাবনা অনেক সময় অবহেলায় চলে যায়। তবে ফ্যাশনের দুনিয়ায় যখন বব হেয়ারকাট ঝড় তুলেছে, তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়ে— কাটবো, না কি একটু অপেক্ষা করবো?
দেখতে সুন্দর লাগছে বলেই কি কাটতে চাই, নাকি সত্যিই আমার মানাবে?
এই ধরনের সিদ্ধান্তের আগে চুল সজ্জাকরদের পরামর্শে নিজেকে কয়েকটি প্রশ্ন করা জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এই প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর আগেই জানতে পারেন তাহলে বব কাট নেওয়ার পরে আফসোসের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।
সত্যিই কি বব হেয়ারকাট চান, নাকি শুধু ট্রেন্ড অনুসরণ করছেন?
কানাডাভিত্তিক কেশ পরিচর্যার ব্র্যান্ড ‘ডিপিটি-ডু’-এর কোঁকড়া চুলের বিশেষজ্ঞ ডেইজি আলফারো রিয়েলসিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, “ট্রেন্ড মানে মজা। তবে সেটা সব সময় নিজের চুলের ধরন বা জীবনধারার সঙ্গে মানানসই নাও হতে পারে।”
অনেক সময় দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোনো তারকার কেশ বিন্যাস দেখে নিজের ওপর কল্পনা করা হয়। তবে বাস্তবে সেটা মানাবে কিনা, সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
আলফারোর মতে, “যদি নিজে অনুপ্রাণিত হন সেটা দারুণ। তবে যদি কারও স্টাইল নকল করতে গিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে পরে অসন্তুষ্ট হতে পারেন।”
পনিটেইল বা বেণী ছাড়া কি থাকতে পারবো?
দীর্ঘদিন লম্বা চুল রাখলে অনেকেই সকালে তাড়াহুড়োতে পনিটেইল বা খোঁপা করে ফেলেন। তবে ‘বব কাট’ বা ‘লব’ (লম্বা বব) স্টাইলে সেটা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক তারকা কেশসজ্জাকর মাইকেল ডুএনাস বলেন, “যদি ঘুমানো বা ব্যায়ামের সময় অথবা ঘরের দৈনন্দিন কাজে চুল তুলে রাখতে অভ্যস্ত হন, তাহলে বব হেয়ারকাট আপনার জন্য নয়।”
তিনি আরও বলেন, “যারা চুল খোলা রাখতে অস্বস্তি বোধ করেন বা বাইরে বের হওয়ার আগে প্রতিদিন স্টাইল করার সময় পান না, তাদের জন্য এই কাট যথাযথ নয়।”
নিজের মুখাবয়ব উন্মুক্ত রাখতে কি আত্মবিশ্বাসী?
বব কাট মূলত মুখের গঠন, চিবুক, গাল এবং গলার অংশকে স্পষ্ট করে তোলে।
ডেইজি আলফারো বলেন, “বব মানেই হচ্ছে মুখের অনেক অংশ সামনে নিয়ে আসা। অনেকের জন্য এটা সাহসী অনুভূতির, আবার অনেকের জন্য এতে মানিয়ে নিতে সময় লাগে।”
যারা দীর্ঘদিন ধরে লম্বা চুলে নিজের মুখ আড়াল করে এসেছেন, তাদের হঠাৎ বব কাট নিতে গেলে আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দিতে পারে। তাই ভালোভাবে ভাবতে হবে নিজে কি মানসিকভাবে প্রস্তুত?
ঘন ঘন কি পার্লারে যেতে পারবেন?
লম্বা চুল কাটতে অনেক সময় তিন মাস পর্যন্ত বিরতি নেওয়া গেলেও, বব হেয়ারকাট ঠিকঠাক রাখতে হলে প্রতি ছয় থেকে আট সপ্তাহ অন্তর কেশ ছাঁটতে হবেই।
মাইকেল ডুএনাস বলেন, “বব কাট দেখতে সবচেয়ে ভালো লাগে যখন এটা ঠিক তার নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যে থাকে। তাই যদি দেড়-দুই মাস অন্তর চুল কাটাতে রাজি না থাকেন, তাহলে এই চুলের কাটিং হতাশ করতে পারে।”
তাই নিয়মিত পার্লারে যাওয়ার সময়, খরচ এবং ধৈর্য সবকিছুর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
প্রতিদিন কি চুলের স্টাইলিং-এ সময় দিতে পারবেন?
বব হেয়ারকাট মানেই কিন্তু ‘উঠে দাঁড়ালাম, চুল এমনিই ঠিক হয়ে গেল’ এমনটা নয়। বিশেষ করে যাদের চুল কোঁকড়া, ঢেউ খেলানো বা ঘন, তাদের জন্য তো একেবারেই নয়।
ডেইজি আলফারো বলেন, “বব কাট নিজে নিজে বসে যায়, এমন না। প্রতিদিন হেয়ার আয়রন, কার্লিং ক্রিম কিংবা ডিফিউজার ব্যবহার করতে হতে পারে।”
অর্থাৎ যদি প্রতিদিন চুলে সময় দিতে না চান বা সেই ধৈর্য না থাকে, তাহলে এই কাট বিরক্তির কারণ হতে পারে।
নিজের চুলের গঠন কি বব কাটের জন্য উপযুক্ত?
সব চুলের গঠন বব কাট মানানসই নয়। বিশেষ করে খুব বেশি কোঁকড়া বা ঘন ‘কার্লি হেয়ার’ হলে বব স্টাইল করতে সময় বেশি লাগে এবং স্টাইল বসতেও সময় নেয়।
মাইকেল ডুএনাস বলেন, “যাদের চুল অত্যন্ত কোঁকড়া, তাদের জন্য বব কাট কিছুটা কঠিন হতে পারে। এটা মানে এই নয় যে বব কাট নিতে পারবেন না, তবে একটি নতুন রুটিন মেনে চলতে হবে।”
তাই বব কাটের আগে নিজের হেয়ার টাইপ বা চুলের ধরন বুঝে, প্রয়োজন হলে স্টাইলিস্টের পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
আরও পড়ুন