Published : 10 Jul 2025, 05:30 PM
প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে যা খাওয়া হয়, তার প্রভাব শুধু পেট ভরানোতেই নয়, দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের ওপরেও গভীর প্রভাব ফেলছে।
সম্প্রতি ‘নেচার মেডিসিন’ নামের আন্তর্জাতিক একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্রে প্রকাশিত নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রক্রিয়াজাত মাংস, মিষ্টি পানীয় এবং ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিডের (ট্রান্স ফ্যাট) সামান্য পরিমাণ খেলেও টাইপ-টু ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং মলাশয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
এই গবেষণার প্রধান গবেষক ডা. দেমেওজ হেইল সিএনএন ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, “প্রতিদিন অল্প পরিমাণ প্রক্রিয়াজাত মাংস, মিষ্টি পানীয় এবং ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড খাওয়াও টাইপ-টু ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।”
ছোট অভ্যাস, বড় বিপদ
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন মাত্র একটি হটডগ (প্রক্রিয়াজাত মাংস) খেলে টাইপ-টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ১১ শতাংশ এবং মলাশয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি ৭ শতাংশ বেড়ে যায়।
আবার প্রতিদিন একটি ১২ আউন্স পরিমাণের কোমল পানীয় খেলে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ৮ শতাংশ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি ২ শতাংশ বাড়ে।
এই গবেষণার সাথে যুক্ত না থেকেও যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়-এর পুষ্টি ও মহামারি-বিদ্যা বিভাগের প্রধান ডা. নিতা ফরুহি একই প্রতিবেদনে বলেন, “এই গবেষণা আবারও দেখিয়েছে যে, সুস্বাস্থ্য রক্ষায় প্রক্রিয়াজাত মাংস, মিষ্টি পানীয় এবং শিল্পজাত ট্রান্স ফ্যাটের অভ্যাসগত গ্রহণ থেকে বিরত থাকাই উত্তম।”
তিনি আরও বলেন, “প্রক্রিয়াজাত মাংসের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, নিরাপদ মাত্রা বলে কিছু নেই। যত কম খাওয়া যায়, ততই মঙ্গল।”
ঝুঁকি যতটা দেখায়, তার চেয়েও বেশি
গবেষণার ফলাফল দেখে অনেকেই ভাবতে পারেন, ঝুঁকির মাত্রা খুব বেশি নয়। ত
বে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হার্ভার্ড টি. এইচ. চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেল্থ-এর সহকারী অধ্যাপক ডা. মিংইয়াং সাং বলেন, “আসলে তথ্য ঘেঁটে দেখলে দেখা যায়, সামান্য পরিমাণ খাওয়ার সাথেও রোগের ঝুঁকি স্পষ্টভাবে দেখা গেছে। এটা একেবারে স্পষ্ট ও ধারাবাহিক।”
এই গবেষণায় একটি বিশেষ বিশ্লেষণ পদ্ধতি ‘বার্ডেন-অব-প্রুফ’ ব্যবহার করা হয়েছে। যা আগের বহু গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করে এবং সেসব গবেষণার গুণগত মানকেও বিবেচনায় রাখে।
আর এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, এই খাবারগুলো স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়।
তবে গবেষণাগুলো ছিল পর্যবেক্ষণমূলক। অর্থাৎ এগুলোতে সরাসরি প্রমাণ নয়, বরং সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ‘ইউনিভার্সিটি অব রিডিং’-এর পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডা. গুন্টার কুহনলে বলেন, “যত উন্নত প্রযুক্তিই ব্যবহার করা হোক না কেন, খাদ্যভ্যাস নিয়ে মানুষের স্মৃতির ওপর নির্ভর করতে হয়। যা ভুল বা অসম্পূর্ণ হতে পারে।”
কেন এসব খাবার ক্ষতিকর?
ডা. মিংইয়াং সাং বলেন, “প্রক্রিয়াজাত মাংস ও মিষ্টি পানীয় দেহে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এই প্রদাহ-ই দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন রোগের জন্ম দেয়। যেমন- হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সার।”
ডা. কুহনলে বলেন, “যারা নিয়মিত মিষ্টি পানীয় পান করেন, তাদের সেটা কমিয়ে ফেলা উচিত। অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত মাংস এবং ট্রান্স ফ্যাট থেকেও যতটা সম্ভব দূরে থাকা উচিত।”
সমাধান: পরিমিতি ও বৈচিত্র্যময় খাবার
তবে সবাইকে হঠাৎ করে আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই।
ডা. কুহনলে বলেন, “খাবার শুধু পুষ্টির উৎস নয়। এটি সংস্কৃতি, আনন্দ, পরিবার এবং সামাজিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই শুধু স্বাস্থ্যঝুঁকির দিকে তাকিয়ে খাবারকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা উচিত নয়।”
ডা. ফরুহি বলেন, “শুধু কী খাওয়া উচিত নয়, সেটাই নয় বরং কী খেলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।”
গবেষণায় দেখা গেছে- ফলমূল, শাকসবজি, পূর্ণ শস্য, ডাল, বাদাম ও টক দুগ্ধজাত খাবার (যেমন: দই) স্বাস্থ্য এবং দীর্ঘজীবনের জন্য উপকারী।”
আরও পড়ুন