Published : 25 May 2025, 05:00 PM
দশ বছর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের গুম হওয়া ও পরে তার ভারতের শিলংয়ে যাওয়ার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার মধ্যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
ওই সময় ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির বাংলাদেশ ব্যুরো প্রধানের দায়িত্ব পালন করা শফিকুল আলম রোববার ফেইসবুকে এক পোস্টে তখনকার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন।
তিনি লিখেছেন, সালাহউদ্দিনের শক্তিশালী বিবৃতির কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন, যার ধারাবাহিকতায় বিএনপির এই নেতা অপহরণ ও গুমের শিকার হন।
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক সাংবাদিকের পোস্টের পর গুমের ওই ঘটনাটি নতুন করে আলোচনায় আসে। ওই সাংবাদিক তার পোস্টে লিখেছেন, তিনি শিলংয়ে সালাহউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তার বিলাসবহুল বাংলোয় আয়েশী জীবন যাপনের কথাও লেখেন ওই পোস্টে।
২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরা থেকে সালাহউদ্দিন নিখোঁজ হন। প্রায় দুই মাস পর ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ তার সন্ধান পায়।
সালাহউদ্দিনকে আটকের পর অনুপ্রবেশের অভিযোগে ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা করে মেঘালয় পুলিশ। সেই মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে ২০১৮ সালে সালাহউদ্দিন খালাস পান। ভারত সরকার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তাকে সেখানেই থাকতে হয়।
২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আপিলেও খালাস পান সালাহউদ্দিন এবং আদালত তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেয়। এরপর ওই বছরের ৮ মে তিনি ভ্রমণ পাস অনুমোদনের জন্য ভারতের আসাম রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেন। তবে সেই আবেদন ঝুলে ছিল। গত ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ১১ আগস্ট প্রায় ৯ বছর পর দেশে ফিরে আসেন বিএনপি সরকারের সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী।
রোববার ফেইসবুক পোস্টে প্রেস সচিব শফিকুল আলম লিখেছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অপহরণের পর সালাহউদ্দিন আহমদকে গুম করে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে তিনি বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে গোপন একটি জায়গা থেকে দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
“সেই সময় আওয়ামী লীগ সরকার দলটির ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন চালাচ্ছিল। খালেদা জিয়াকে তার গুলশানের কার্যালয়ে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল,” লেখেন শফিকুল আলম।
স্মৃতিচারণ করে তিনি পোস্টে লিখেছেন, “সে সময় দলের নেতারা কেউ-কেউ আত্মগোপনে চলে যান, কেউবা আওয়ামী লীগের পুলিশ বা র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন। আমি ও এএফপির দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান ক্রিস ওটন ব্রিটিশ হাই কমিশনার রবার্ট গিবসনের সঙ্গে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে গোপনে প্রবেশ করে এএফপির জন্য তার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম।
“সিভিল পোশাকের নিরাপত্তা রক্ষীরা আমাদের ব্রিটিশ হাই কমিশনের সদস্য ভেবে ভেতরে ঢুকতে দেয়।”
শফিকুল বলেছেন, “সেই সময়ে প্রতিদিন আমরা সালাহউদ্দিন আহমেদের বিবৃতি পেতাম। ক্রিস ও আমি তার বিবৃতিগুলো আমাদের প্রতিবেদনে জোরালোভাবে ব্যবহার করতাম। কারণ, সেই বিবৃতির লেখাগুলো ছিল বেশ গোছানো, কার্যকর এবং ক্ষুরধার। আমি সব সময়ই মনে করতাম রুহুল কবির রিজভী দেশের অন্যতম নিবেদিত রাজনৈতিক কর্মী। কিন্তু তার লেখা বিবৃতিগুলো ছিল জটিল ও দুর্বোধ্য। সেখান থেকে শক্তিশালী কোনো উদ্ধৃতি বের করা কঠিন হত।
“কিন্তু একবার রিজভী গ্রেপ্তার হলেন এবং সালাহউদ্দিন আহমেদ গোপন অবস্থান থেকে মুখপাত্রের দায়িত্ব নিলেন। তিনি বিএনপির ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং অসাধারণ কিছু বিবৃতি পাঠাতে শুরু করলেন। সেগুলো ছিল বোমার মতো, যা সরাসরি শেখ হাসিনার শাসনকে চ্যালেঞ্জ করছিল। সেই বিবৃতিগুলোর ভাষা ছিল কঠোর এবং সবসময় লক্ষ্যভেদী। আমরা নিরাপত্তা সূত্র থেকে জানতে পারি, শেখ হাসিনা এতটাই ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন যে, তিনি সালাহউদ্দিন আহমেদকে ধরতে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন।”
এরপর সালাহউদ্দিন আহমদকে গুম করা হয় উল্লেখ করে শফিকুল আলম লিখেছেন, “অনুমিতভাবে ঠিকই ২০১৫ সালের শুরুর দিকে সালাহউদ্দিন আহমেদ অপহরণ ও তারপর গুমের শিকার হন। তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ তার মুক্তির দাবিতে সাহসী আন্দোলন শুরু করেন। তার লড়াই ছিল চোখে পড়ার মতো এবং অত্যন্ত সাহসী একটা লড়াই। যা তিনি করেছিলেন ‘মায়ের ডাক’ এর হাজেরা খাতুন ও তার মেয়েদের সঙ্গে শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে।”
স্ত্রীর আন্দোলনের কারণে হয়ত সালাহউদ্দিন বেঁচে গিয়েছিলেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সম্ভবত হাসিনা আহমেদের তৈরি করা সেই আন্দোলন ও প্রতিবাদ আংশিকভাবে হলেও নিরাপত্তা বাহিনীকে সালাহউদ্দিন আহমেদকে সীমান্ত পেরিয়ে শিলং পাঠাতে বাধ্য করেছিল।”
শফিকুল বলেন, “অধিকাংশ মানুষ, যাদের মধ্যে আজ বিএনপির অনেক তরুণ, যারা কি না দিন দিন আরও অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে, তাদের মতো কিছু কর্মীও দলের ১৭ বছরের লম্বা লড়াইয়ের সাহসী অধ্যায়গুলো ভুলে গেছে।
“আর গতকাল আমরা তার (সালাহউদ্দিন) বিরুদ্ধে কিছু ঘৃণ্য অপপ্রচার দেখলাম। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, এই সংগ্রামগুলোই শেখ হাসিনার সবচেয়ে নিষ্ঠুর শাসনামলে তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল। কিন্তু, অধিকাংশ মানুষ আমাদের রাজনৈতিক সংগ্রামের সেই স্বর্ণালি এবং গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়গুলো ভুলে গেছে। ভালো সময় যেন সব খারাপ স্মৃতিই মুছে দিয়েছে।”
৯ বছর পর দেশে ফিরেছেন বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন