Published : 10 Jul 2025, 04:08 PM
প্রস্তুতি শেষ হওয়া সাপেক্ষে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে বলে যে বার্তা সরকারের তরফ থেকে এসেছে, সে জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
পাশাপাশি এই প্রস্তুতি এগিয়ে নিতে এবং নির্বাচনি পরিবেশ তৈরি করতে ইসির প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় কথা বলছিলেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, “আমি আজকে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ দিতে চাই এই ফোরাম থেকে যে, তিনি নির্দেশ দিয়েছেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সব কাজ গুছিয়ে রাখার জন্য নির্বাচন কমিশনকে, এটা অত্যন্ত ইতিবাচক ব্যাপার ।
“আমরা আশা করব যে, নির্বাচন কমিশন এই কাজ (নির্বাচনের প্রস্তুতি) খুব দ্রুততার সঙ্গে শেষ করে তারা একটা নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবেন। আমরা দাবি করছি যেন এই নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় সেই ধরণের গ্রহণযোগ নির্বাচন নির্বাচন কমিশন উপহার দিতে পারে এবং সেইভাবে যেন তার কাজ করেন।”
‘নির্বাচন হবে কি হবে না’-রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন গুঞ্জনের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমি খুব আশাবাদী মানুষ। এখানে মান্না ভাই (মাহমুদুর রহমান মান্না) জানতে চেয়েছেন নির্বাচন হবে কি হবে না। অনেকে বলেছেন যে, হবে না। কেন?
“নির্বাচন তো এদেশের মানুষ চায়, নির্বাচনের জন্য তো এদেশের মানুষ প্রাণ দিয়েছে। কারণ মানুষ একটা নির্বাচিত প্রতিনিধি চায় পার্লামেন্টের মধ্য দিয়ে।এ জিনিসগুলো নিয়ে আমি মনে করি কোনো সমস্যা নেই। যত দ্রুত সম্ভব আমরা সংস্কারের কাজগুলো করে আমরা নির্বাচিত সরকারের দিকে যাই, গণতন্ত্র উত্তরণের পথে যাই।”
বুধবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত এক বৈঠকের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য ডিসেম্বরের মধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
ভোটে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে গত তিন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের যথাসম্ভব বাদ দেওয়া, সব ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, পুলিশের শরীরে ক্যামেরা স্থাপনের নিদের্শনা দিয়েছেন সরকার প্রধান।
জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের যৌথ উদ্যোগে জুলাই ‘ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
অনুষ্ঠানে ফ্যাসিবাদবিরোধীসহ জুলাই আন্দোলনে শহীদ ৬৪ জন সাংবাদিকের ওপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন ডিইউজের সহসভাপতি রাশেদুল হক। অনুষ্ঠানে বিএফইউজের প্রয়াত সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর পরিবার এবং জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ছয় সাংবাদিকের পরিবারের হাতে সন্মাননা তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বিএনপি মহাসচিব জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, নাগরিক ঐক্যে সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে নিয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন ও জুলাই ছাত্র-জনতা আন্দোলনের একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।
‘সংসদ নির্বাচন কেন চাই’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “আমরা সংসদ নির্বাচন করতে চাই। কেন? নির্বাচন যদি সংসদের না হয় তাহলে দেশে একটা অন্ধকারী শক্তি আবার ক্ষমতায় আসবে। অতএব আমাদের সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করতে হবে যাতে নির্বাচন হয়।
“আমি মনে করি, নির্বাচন একটা হবে সেই নির্বাচন সবাইকে করতে হবে। যারা মনে করছে যে, এভাবে নির্বাচন করা যাবে না, তারাও দেখবেন এভাবে যদি নির্বাচন না করি তাহলে যে অবস্থা আসবে, যে ভাব তৈরি হবে সেইভাবে ভাবের মধ্যে রাজনীতিই করতে পারবেন না।এই কারণে সবাই যুক্তির কাছে আসতে হবে।”
প্রস্তুতি শেষ হলে রোজার আগে নির্বাচন হতে পারে: প্রেস সচিব
মান্না বলেন. “যেগুলো এখন আমরা একমত হতে পারব না, রেখে দেব। আগামী দিন যারা ক্ষমতায় আসবে তারা সেই বিষয়গুলো যদি পছন্দ করেন তাহলে চেষ্টা করবেন। কারো কারো মনে হচ্ছে যে, ভাই এখনই মানে নাই তখন তো মানবেই না। যদি কোনো কারণে টু-থার্ড মেজরিটি পেয়ে যায় তাহলে তাদের সাথে কথাই বলা যাবে না, টু-থার্ড মেজরিটিতে সব কিছু বদলাবে।
“কথাটা উঠে গেল বলে বলেই ফেলি, আমি মনে মনে ব্যক্তিতভাবে কোনো দলই আগামী নির্বাচনে টু-থার্ড পাওয়া উচিত নয়।"
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের পরে আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রক্রিয়ার দিকে এগিয়ে যেতে চাচ্ছি বার বার একটি অপশক্তি সেই পথে বাধার সৃষ্টি করছে। কিছু দূর এগিয়ে আবার কিছু দূর পিছিয়ে।”
তিনি বলেন, ‘‘ আমাদের দেশে নির্বাচন আসলে পরাশক্তির যে খেলা হয় সেই খেলা কিন্তু আমরা দেখতে পারছি। অর্থপাচার, লুটপাট, দুর্নীতির সিন্ডিকেট কিন্তু এখনো শেষ হয়ে যায়নি।”
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ইলিয়াস খান, একে এম মহসিন, ইরফানুল হক জাহিদ, সাঈদ খান, দিদারুল আলম, খন্দকার আলমগীর হোসেন ও প্রবাসী সাংবাদিক ইমরান আনসারী বক্তব্য রাখেন।