Published : 10 Jul 2025, 06:01 PM
প্রায় ৮ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে একটি রেলস্টেশনে দুর্ঘটনায় পায়ের পাঁচটি আঙুল হারানো বাংলাদেশি নাগরিক মারুফ হোসেনের (৩২) পক্ষে ক্ষতিপূরণের রায় দিয়েছে আদালত।
গত ২ জুলাই নিউ ইয়র্ক সিটির ব্রঙ্কস কাউন্টি সিভিল কোর্টের ১২ সদস্যের একটি জুরি বোর্ড মারুফকে ২২.৭৫ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় আনুমানিক ২৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা) ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পক্ষে রায় দেন।
ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৭ সালের জুন মাসে। সে সময় মারুফের বয়স ছিল ২৪ বছর। নিউ ইয়র্ক সিটির ব্রঙ্কস এলাকার পার্কচেস্টার রেল স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে পা পিছলে রেললাইনে পড়ে যান তিনি।
তখন একটি ট্রেন তার বাম পায়ের ওপর দিয়ে গেলে কেটে যায় পায়ের পাঁচটি আঙুল। পাশাপাশি তিনি আঘাত পান নিতম্ব ও মেরুদণ্ডে।
দুর্ঘটনার পর মারুফকে ভর্তি করা হয় ব্রঙ্কসের জ্যাকবি হাসপাতালে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মেট্রোপলিটন ট্রানজিট অথরিটির (এমটিএ) বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগে ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করেন।
মামলায় মারুফের দাবি ছিল, স্টেশনের প্ল্যাটফর্মটি ছিল দীর্ঘদিন ধরে ‘অব্যবস্থাপনার শিকার, রক্ষণাবেক্ষণহীন ও বিপজ্জনক’। ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিনি দুর্ঘটনার শিকার হন।
তবে এমটিএ মামলার শুরু থেকেই নিজেদের দায় অস্বীকার করে। বরং তারা পাল্টা অভিযোগ আনে যে, মারুফ ‘আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে’ ট্রেনলাইনে ঝাঁপ দিয়েছিলেন।
এই দাবির পক্ষে তারা দুইজন সাক্ষীও আদালতে উপস্থাপন করে। একই সঙ্গে তারা মাত্র এক লাখ ডলারে মামলাটি নিষ্পত্তির প্রস্তাব দেয়।
মারুফ ওই প্রস্তাবে রাজি হননি। তার আইনজীবী নিক লিয়াকাস আদালতে প্ল্যাটফর্মের দুরবস্থা, দুর্ঘটনার সময়কার পরিস্থিতি এবং চিকিৎসা নথিপত্র উপস্থাপন করে জানান, এটি ছিল নিছক দুর্ঘটনা।
ঘটনার সময় ছিল রমজান মাস এবং মারুফ রোজা ছিলেন, এই তথ্য আদালতের সামনে তুলে ধরেন তার মানসিক চিকিৎসক নাবিল করোম। তিনি সাক্ষ্যে বলেন, “একজন ধর্মপ্রাণ রোজাদার ব্যক্তি আত্মহত্যা করতে পারেন, এমন ধারণা অমূলক।”
সব প্রমাণ ও সাক্ষ্য পর্যালোচনার পর জুরি বোর্ড মারুফের দাবিকে যৌক্তিক বলে বিবেচনা করে। রায়ে বলা হয়, তার প্রত্যেকটি হারানো আঙুলের জন্য আনুমানিক ৪.৫ মিলিয়ন ডলার করে মোট ২২.৭৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ প্রাপ্য।
রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় মারুফ বলেন, “এমটিএ আমাকে ভুল প্রমাণ করতে চেয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”
তার আইনজীবী বলেন, “এই রায় শুধু একজন ব্যক্তির পক্ষে নয়, বরং বড় করপোরেশনগুলোর দায় এড়ানোর প্রবণতার বিরুদ্ধেও একটি স্পষ্ট বার্তা।”
এদিকে, এমটিএ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা রায়টি পর্যালোচনা করছে এবং প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে আপিল করবে।