Published : 31 May 2025, 05:55 PM
আসন্ন কোরবানির ঈদে টাঙ্গাইলে চাহিদার তুলনায় ২৯ হাজারের বেশি গবাদি পশু প্রস্তুত আছে। তাই হাটে কোরবানির পশুর দাম কম থাকার আশা করছে ক্রেতারা।
অন্যদিকে খামারিরা বলছেন, গো-খাদ্যের দাম ও লালনপালনের খরচ বাড়ায় পশুর দাম এবার কিছুটা বেশি হতে পারে। তবুও ভারতীয় গরু প্রবেশ না করলে ভালো দাম পাওয়ার আশা তাদের।
টাঙ্গাইল জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. শহীদুল আলম বলেন, ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় ২৬ হাজার ৩৩টি খামারে দুই লাখ ৩৬ হাজার ৯৯০টি গবাদি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এরমধ্যে ১ লাখ ৫০ হাজার ৬৯টি গরু, ১ লাখ ২২ হাজার ৩৮২টি ছাগল এবং ৯ হাজার ১১৯টি ভেড়া রয়েছে।
এসব পশুর বিপরীতে জেলায় কোরবানির চাহিদা রয়েছে দুই লাখ ১১ হাজার ৯৭৪টি এবং মহিষ রয়েছে ৪২০টি। ফলে মোট উদ্বৃত্ত আছে ২৯ হাজার ৪৪৪টি গবাদি পশু।
এদিকে খামারিরা বলছেন, কোরবানির বাজারে ভালো দাম পাওয়ার আশায় শেষ সময়ে তারা কোরবানিযোগ্য পশুর যত্ন-পরিচর্যা বাড়িয়েছেন। কিন্তু পশু-খাদ্যের দাম অনেক বেশি হওয়ায় লালনপালন বেশ কষ্টসাধ্য কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তারা বলছেন, জেলায় পর্যাপ্ত গরু-ছাগল রয়েছে। তাই বাইরে থেকে পশু আনতে হবে না। বরং তারাই গরু-ছাগল-ভেড়া অন্য জেলায় পাঠাতে পারবেন।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলা কাতুলী ইউনিয়নের খামারি সুমন দেওয়ান বলেন, “আমার ৪০টা গরু ছিল। রোজার ইদে ১৪টা সেল দিছি। এখন ২৬টা আছে। তবে এবার খরচ অত্যন্ত বেশি। ভুষির দাম বেশী, জমিতে ঘাস চাষ করতে বেশি টাকা লাগছে। গরুকে প্রকৃতির খড়-ঘাস এগুলা খাওয়াচ্ছি। “
“গোবর থেকে আমরা বায়োগ্যাস উৎপন্ন করি। যেটা ডাস্ট থাকে সেটা জৈব সার উৎপন্ন হচ্ছে। যে কারণে ঘাসের খরচ কিছুটা কমছে। তবুও আমরা দুশ্চিন্তায় আছি।”
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে ৪০ লক্ষ টাকা লোন নিয়ে খামার করেছি। দ্রব্যমূল্যের যে গতি তাতে যদি ন্যায্য দাম না পাই বা ভারত অথবা বার্মা থেকে গরু আসে তাহলে আমি চরম ক্ষতিগ্রস্থ হব।
“তাই সরকারের কাছে অনুরোধ করব- আমরা যেন ন্যায্য দামই পাই। প্রতিবেশী দেশ থেকে চোরাই পথে গরু যেন না আসে।”
সদর উপজেলা দাইন্যা ইউনিয়নের খামারি মো. লাভলু মিয়া বলেন, “গ্রামগঞ্জে যারা খামার করছেন কেউ লাভবান হচ্ছে, কেউ লাভবান হচ্ছে না। আমরা সব খোঁজই রাখছি। প্রতিবারের মতো এবারও যদি বিদেশ থেকে গরু আসে তাহলে খামারিরা অবশ্যই লস খাবে। কোনো লাভ হবে না।
তিনি বলেন, “ইন্ডিয়া থেকে যে গরুগুলো আসে সেগুলোর দাম একটু কম। কিন্তু খামারিরা যে গরু পালছে সেগুলোতে খরচ বেশি হচ্ছে। কারণ ভুষি ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা দাম। এছাড়া লেবার খরচ আছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা খামারিরা পশু ডাক্তারের পরামর্শে গরুকে খাওয়াই। মোটাতাজা করার জন্য যারা উল্টাপাল্টা ঔষধ খাওয়ায় তারা চরম অন্যায় করে।”
তার খামারে ২০টা গরুর মধ্যে এখন সাতটা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমার একটা গরু পাঁচ লাখ চাইতেছি। কাস্টমার তিন লাখ বলতেছে।”
দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ গরু আছে, যা ঈদের কোরবানির জন্য যথেষ্ট উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি সরকারের কাছে দাবি করবো বিদেশ থেকে গরু যেন না আসে।”
জেলার এসব খামারে কাজ করেন অনেক শ্রমিক। অনেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি যুক্ত আছেন খামারের কাজে। মালিক লাভবান হলে তাদের পরিশ্রমও সার্থক হবে বলে জানান তারা।
সদর উপজেলা কাতুলী ইউনিয়নের খামারির কর্মচারী আকবর আলী বলেন, “ঘুম থেকে উঠে গরুর চারি পরিষ্কার করি। পানি দেই, কুড়া মিক্সার করি, মেশিনের ঘাস কাটি। এভাবেই সংসার চলে।
“ছয় মাস ধরে চাকরি করি। গরুর মালিক যাতে লাভবান হতে পারে সেজন্য আমি পরিশ্রম দিতেছি। এবার বাইরের গরু না আসে তাহলে আমরা গরু বিক্রি করে লাভবান হতো পারবো।”
একই ইউনিয়নের পলাশ মিয়া বলেন, “আমি পড়াশোনার পাশাপাশি খামারে কাজ করি। কোনো গরুর কী অসুবিধা হচ্ছে সেটার খোঁজ খবর রাখি। টিট্রমেন্ট দেই। আমাদের খামারে পর্যাপ্ত পরিমাণ কাঁচা ঘাস আছে। যা গরুকে খাওয়াই। এছাড়া অরগানিক খাবারও খাওয়াই।”
তার কাজ করা খামারে দুই থেকে তিন লাখ টাকার গরু আছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এবার বাইরে থেকে গরু আসবে না আশা করি। তাই ভালো দাম পাওয়া যাবে।”
এদিকে অনেক খামারি এরমধ্যে গরু বিক্রি শুরু করেছেন। জেলার বাইরে বিক্রি করতে অনেকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মও ব্যবহার করছেন। সেখানে প্রচার চালানোয় অনেকে তাদের নির্দিষ্ট পশু কিনতে আগ্রহ জানিয়ে মেসেজ করছেন। কেউ কেউ অগ্রিম বায়নাও দিচ্ছেন।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শহীদুল আলম বলেন, বিভিন্ন উপজেলার মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করে কোরবানির পশুর চাহিদা নিরূপণ করা হয়ে থাকে। তাছাড়া এবার ছোট ছোট পশুর কোরবানিগুলোও হিসাবে ধরার ফলে চাহিদার সংখ্যাও বেড়েছে।
তিনি বলেন, জেলায় এবার খামার বেড়েছে ৩১১টি। গতবারের চেয়ে এবার কোরবানির জন্য ৩২ হাজার ৫৮৪টি পশু বেশি প্রস্তুত করা হয়েছে। তাই চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি পশু জেলায় প্রস্তুত আছে। এ কারণে জেলায় কোরবানির পশুর দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
কোরবানির হাটের প্রস্তুতি নিয়ে তিনি বলেন, হাটে গবাদি পশু অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসার জন্য ভেটেরিনারি টিম নিয়োজিত রাখা হবে।