Published : 04 Nov 2023, 08:18 PM
হাসপাতালে সিজারের বিল পরিশোধ করতে না পেরে টাকার বিনিময়ে দত্তক দেওয়া গাজীপুরের শ্রীপুরের নবজাতককে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন বাদশা ও গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইসমাইল হোসেনের উদ্যোগ ও সহযোগিতায় বৃহস্পতিবার রাতে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি হাসপাতালে জন্ম নেওয়া শিশুটিকে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মধুপুর গ্রামের এক নিঃসন্তান দম্পতি দত্তক নেন। তারা হাসপাতালের বিল পরিশোধ করেছিলেন। প্রায় ১৩ দিন পর সেই শিশু মায়ের কোলে ফিরেছে।
সন্তানকে বুকে পেয়ে খুঁশি মা শিরিন আক্তার। তিনি বলছিলেন, “১০ মাস পেটে ধারণ করে জন্ম দিয়েছি যে সন্তানকে, অভাবের কারণে তাকে হারাতে হয়েছিল। সারাক্ষণ কান্নাকাটি করতাম, রাতে ঘুমের মধ্যে সন্তানকে দেখতাম। গত কয়েকটি দিন ছিল আমার কাছে যন্ত্রণার। ছেলেকে পেয়ে মনে হচ্ছে আজ নতুন জীবন পেয়েছি।”
যে দম্পতি সন্তানটিকে দত্তক নিয়েছিলেন তারা টাকা দাবি করেছিলেন। সেই টাকা দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না শিরিনের পরিবারের। সেই টাকা দিয়েছেন ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন বাদশা।
শিরিন এজন্য ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
শনিবার দুপুরে শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামে নবজাতককে দেখতে যান ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন বাদশা। তিনি গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজের বড় ভাই।
তিনি বলেন, “বিষয়টি আমাকে কাঁদিয়েছে, স্তব্ধ করেছে। তাৎক্ষণিকভাবে আমি ইউএনও, জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি। দীর্ঘ সময়ের চেষ্টায় যাবতীয় খরচ বহন করে নবজাতককে তার মায়ের কোলে ফেরত দিতে সক্ষম হয়েছি। আমি আমার দায়িত্ববোধ থেকেই কাজটি করেছি।”
শিরিন আক্তারের (২০) বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট থানার মনিকুরা গ্রামে। তিনি মা-বাবার সঙ্গে শ্রীপুরের ফরিদপুর গ্রামে ভাড়া থাকেন। শিরিন আক্তারের দেড় বছর বয়সী আরেকটি ছেলেসন্তান রয়েছে।
শিরিনের স্বামী আরিফুল ইসলাম পরিবহন চালকের সহকারী (হেলপার) হিসেবে কাজ করেন। চার-পাঁচ মাস আগে থেকে নানা কারণে তার সঙ্গে শিরিনের দূরত্ব তৈরি হয়। এরপর থেকে পরিবারের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই।
১৬ অক্টোবর শিরিন ময়মনসিংহের চরপাড়া এলাকার স্বাধীন নার্সিং হোমে ভর্তি হন। পরে সিজারের মাধ্যমে ছেলেসন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে না পারায় তারা বিপদে পড়েন। পরে বাধ্য হয়ে স্থানীয় এক ব্যক্তির মধ্যস্থতায় সন্তানকে দত্তক দেন। কিন্তু এরপর থেকে শিরিন সন্তানের জন্য কান্নাকাটি শুরু করেন।
২৮ অক্টোবর সংবাদ প্রকাশিত হলে উপজেলা প্রশাসন এ নিয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করে। দত্তক নেওয়া দম্পতির সঙ্গে যোগাযোগ করেন গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য হাজী ইসমাইল হোসেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ইউএনও ও আকরাম ভাই আমাকে বিষয়টি জানান। তখন আমি দত্তক নেওয়া পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা প্রথমে রাজি হননি। পরে তাদের চেষ্টায় দুটি পরিবারের মধ্যে সমন্বয় করে শিশুটিকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সে সময় হাসপাতালের বিলের টাকাও পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
শ্রীপুরের ইউএনও তরিকুল ইসলাম বলেন, “জন্মের পর নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মায়ের কোলে থাকা শিশুর অধিকার। তবে পরিবারটির অসহায়ত্বের জন্য এ শিশুকে অন্যের কোলে তুলে দিয়েছিল। আমাদের নজরে আসার পর আমরা উদ্যোগী হয়ে শিশুকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছি।”