Published : 26 Jun 2024, 02:43 PM
চট্টগ্রামে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে চিকিৎসক কোরবান আলীর প্রাণ হারানোর মামলায় আসামি গোলাম রসুল নিশান ও আরিফুল্লাহ রাজুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
বুধবার চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ বেগম জেবুন্নেছার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন তারা।
আসামিপক্ষের আইনজীবী এএইচএম জিয়া উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে আজ আসামি গোলাম রসুল নিশান ও আরিফুল্লাহ রাজু আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেছিল।
“আদালত শুনানি শেষে তাদের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দিয়েছেন।”
আইনজীবী জিয়া উদ্দিন বলেন, “গোলাম রসুল নিশান মামলার ৭ নম্বর আসামি। নিশানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তার নেতৃত্বে আসামিরা উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করত এবং তার নির্দেশনায় হামলা হয়। কিন্তু নিশান ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে ছিল না।
“অপর আসামি রাজুর বিরুদ্ধে এফআইআর এ কোনো অভিযোগ ছিল না।”
এদিকে শুনানি শেষে আদালত কক্ষ থেকে আসামি নিশানকে বের করে নিয়ে যাওয়ার সময় তার অনুসারী কিশোর গ্যাংয়ের প্রায় ৬০ জন সদস্য সেখানে ভিড় করে।
এসময় বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীদের কাজে বাধা দেয় নিশানের অনুসারীরা। ছবি ও ভিডিওচিত্র ধারণ করতে গেলে তাদের হুমকি দেয়।
প্রথম আলোর আলোকচিত্রী সৌরভ দাশ আসামির ছবি তুলতে গেলে তাকে গালিগালাজ করে হুমকি দেয় নিশানের অনুসারীরা। ভিডিও ধারণের সময় ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ভিডিওগ্রাফার মো. আলমগীরকে ধাক্কা দিয়ে সিঁড়ি থেকে ফেলে দেয় তারা। পরে পুলিশ সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এই মামলায় আসামিরা হলেন- মাহির সামি, আকিব, বগা সোহেল, ফয়জুল আকবর চৌধুরী আদর, প্রিন্স বাবু, আরিফুল্লাহ রাজু, অপূর্ব, সাগর, রিয়াদ, সংগ্রাম ও শাফায়েত।
চলতি বছরের ১০ এপ্রিল হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চিকিৎসক কোরবান আলী।
নগরীর আকবর শাহ থানার ফিরোজশাহ কলোনি ঈদগাঁও মাঠ সংলগ্ন জে লাইনে গত ৫ এপ্রিল কিশোর গ্যাংয়ের হামলার মুখে পড়েছিলেন দাঁতের চিকিৎসক কোরবান আলীর ছেলে আলী রেজা।
ছেলেকে মারধর করতে দেখে বাঁচাতে গিয়ে নিজেও হামলার শিকার হন কোরবান আলী।
তার মাথায় পাথর দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন আলী রেজা।
আলী রেজার অভিযোগ, ঘটনার দিন বিকালে ইফতার আনতে যাওয়ার পথে স্থানীয় ‘কিশোর গ্যাংয়ের’ কিছু সদস্য তাকে ঘিরে ধরে মারধর শুরু করে। এটা দেখে তার বাবা কোরবান আলী বাসা থেকে নেমে আসেন ছেলেকে বাঁচাতে। এসময় বখাটেরা কোরবান আলীর মাথায় পাথর দিয়ে আঘাত করে।
সংজ্ঞাহীন অবস্থায় কোরবান আলীকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নেওয়া হয়েছিল, অবস্থার অবনতি হওয়ায় প্রয়োজন হয় আইসিইউ সাপোর্ট। পরে বেসরকারি একটি হাসপাতালে আইসিইউতে রাখা হয়েছিল তাকে।
আলী রেজার ভাষ্য, এর আগে ৬ ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিবেশী এক স্কুল শিক্ষার্থীসহ দুই জনকে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মারধর করার সময় আলী রেজা এগিয়ে গিয়েছিলেন তাদের রক্ষা করতে। এজন্য তিনি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশের সহায়তা নিয়েছিলেন।
চিকিৎসক কোরবানের ছেলে রেজা বলেন, হামলাকারীরা স্থানীয় গোলাম রসুল নিশানের অনুসারী। যিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একজনকে আটকের পর দুই স্কুল শিক্ষার্থীকে রক্ষা করেছিল। এজন্য ওইদিন রাতেই গোলাম রসুল নিশান তাদের বাসায় গিয়ে হুমকি দিয়ে এসেছিলেন। এর প্রতিশোধ নিতে দুই মাস পর আলী রেজার ওপর হামলা করেছিল বখাটেরা।
হামলার ঘটনায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে গত ৬ এপ্রিল আকবর শাহ থানায় আলী রেজা একটি মামলা করেন। মামলার পর পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছিল।
শুরুতে নিশানের খোঁজ পায়নি পুলিশ। পরে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছিল নিশান।
সন্তানকে মারছিল কিশোর গ্যাং, বাঁচাতে গিয়ে চিকিৎসক সংজ্ঞাহীন
চট্টগ্রামে 'কিশোর গ্যাংয়ের' হামলার শিকার সেই চিকিৎসককে বাঁচানো গেল