Published : 03 Jul 2024, 07:20 PM
দলীয় কোন্দলের জেরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম ইকবাল আজাদ হত্যা মামলায় চার জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের বিচারক হালিম উল্লাহ চৌধুরী বুধবার এ মামলার রায় দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- সরাইল উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা রফিক উদ্দিন ঠাকুর, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি মাহফুজ আলী, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ইসমত আলী এবং মোকারম আলী সোহেল।
আর সদর ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার ও ইদ্রিস আলী, সিজার, বাবু, হারিছ, বকুল, লিমন, আবদুল্লাহ, শরীফ ও মিজানকে দেওয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
এ মামলায় অভিযুক্ত ১৯ আসামির মধ্যে বাকি পাঁচজনকে রায়ে খালাস দেওয়া হয়েছে বলে ট্রাইব্যুনালের পিপি অশোক কুমার দাশ জানান।
দণ্ডিতরা সবাই আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর আসামিদের মধ্যে রফিক উদ্দিন ঠাকুর দুই আঙ্গুল তুলে ‘বিজয় চিহ্ন’ দেখান। আসামিদের কয়েকজন ক্ষুব্ধ হয়ে চিৎকার করতে থাকেন। পরে পুলিশ তাদের দ্রুত প্রিজনভ্যানে উঠিয়ে নেয়।
ইকবাল আজাদ ছিলেন সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি। তিনি উপজেলা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। তার স্ত্রী উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম ওরফে শিউলি আজাদ বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের তিনজনের আংশিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।
সরাইলের অরুয়াইল ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধের জের ধরে ২০১২ সালের ২১ অক্টোবর সন্ধ্যায় সরাইল থানা ভবনের কাছে খুন হন আজাদ। পরদিন তার ভাই এ কে এম জাহাঙ্গীর আজাদ বাদী হয়ে ২২ জনের নামে মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাড়ি থেকে প্রাইভেট কার নিয়ে সরাইল বাজারের পথে রওনা হন আজাদ। সঙ্গে ছিলেন তার ভাই জাহাঙ্গীর আজাদসহ দুজন। বাজারের কাছে অন্নদা স্কুল মোড়ে পৌঁছালে আসামি সরাইল আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি আব্দুল হালিম এবং রফিক উদ্দিন ঠাকুর তার পথরোধ করেন।
আজাদ গাড়ি থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রফিক উদ্দিন ঠাকুর বল্লম দিয়ে ইকবালের গলায় আঘাত করেন। সেসময় আজাদ দৌড়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করলে ১০-১৫ জন তাকে ঘিরে ধরে বল্লম ও রড দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। তাকে বাঁচাতে গেলে জাহাঙ্গীর আজাদ ও গাড়িতে থাকা সানাউল্লাহ গিয়াস উদ্দিনকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। পরে আজাদকে গলায় ও বুকে পাড়া দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যান আসামিরা।
মামলার তদন্ত শেষে ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি আবদুল হালিম, সহসভাপতি সাদেক মিয়াসহ ২৯ নেতাকর্মীকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। তাদের মধ্যে হালিম ও সাদেক পরে মারা যান।
২০১৩ সালের ৫ মার্চ আজাদ হত্যা মামলা চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হয়। আদালতে চিকিৎসকসহ মামলার ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য বাকি থাকতেই ১৩৫ কার্যদিবস শেষ হয়ে গেলে ট্রাইব্যুনালের নিয়ম অনুসারে মামলাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালতে ফেরত পাঠানো হয়।
এরপর মামলাটি আবার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের জন্যে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে হাই কোর্টে আবেদন করেন মামলার বাদী। হাই কোর্টের আদেশে ২০২৩ সালের মে মাসে চট্টগ্রাম দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আবার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। সোমবার এ মামলার রায় ঘোষণার দিন রাখা হলেও পরে তা পিছিয়ে বুধবার রায় দিলেন বিচারক।