Published : 30 May 2024, 10:05 PM
তদন্ত কর্মকর্তার ‘গাফিলতির’ কারণে চট্টগ্রামের ইউসুফ আলী হত্যা মামলায় ১২ আসামির সবাই খালাস পেয়ে গেছেন।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ হালিম উল্লাহ চৌধুরী বৃহস্পতিবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেছেন, এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
আর আসামি পক্ষের আইনজীবীর দাবি, এই হত্যা মামলার অভিযোগ ‘কাল্পনিক’। ‘আষাঢ়ে গল্প’ সাজিয়ে আসামিদের মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল।
রায়ে খালাস পাওয়া আসামিরা হলেন- আজগর আলী (৫২), আলী আকবর (৪৩), মাহবুবুল আলম (৩৩), টিপু (২৮), মামুন (৩৩), সাগর খান (২২), মোমিন (২০), আলমগীর (৪০), আয়ুব আলী খান (৫৪), মোহসিনুল হক (৫৫), আবু তালেব (৩৮) ও আবু বক্কর (৫১)।
তাদের মধ্যে আয়ুব আলী খান পলাতক। বাকি ১১ জন রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এ মামলায় অন্য এক আসামি ঘটনার সময় শিশু (১৭) হওয়ার শিশু আদালতে তার বিচার চলছে পৃথকভাবে।
ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অশোক কুমার দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মামলায় মোট ১৬ জনের সাক্ষ্য নেয় আদালত। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরা সবাই নিহতের পরিবারের।
“গত ২৯ মে যুক্তিতর্ক শেষ হয়, আজ রায় ঘোষনার করা হল। আসামিদের বিরুদ্ধে আনা হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় সবাইকে বেকসুর খালাস দেন বিচারক।”
অশোক কুমার দাশ বলেন, “আদালত পুলিশের আলামত জব্দ ও তদন্তের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যার কথা উল্লেখ করে সবাইকে খালাস দিয়েছেন। তদন্ত কর্মকর্তা ঠিকঠাক আলামত জব্দ করতে পারেননি। আলামতে রক্তের দাগ ছিল না। এজাহারের সাথেও গড়মিল ছিল।
“তার তদন্তে গাফিলতি ছিল। এছাড়া ভিকটিমকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিতে যে মোটর সাইকেল ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে, আইও সেটাও জব্দ করতে পারেননি। যার মোটর সাইকেল, তিনি বিদেশে চলে যাওয়ায় সাক্ষ্যও দেননি।”
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর রাঙ্গুনিয়ার রাজানগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হন এম আবু তৈয়ব তালুকদার। এ নিয়ে নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী আজগর আলী ও তার সমর্থকদের সঙ্গে আবু তৈয়বের বিরোধ সৃষ্টি হয়।
তৈয়বের বড় ভাই মো. ইউসুফ আলী বিদেশে থেকে ফিরলে ওই নির্বাচনী বিরোধের জেরে ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তার ওপর হামলায় হয়।
গুরুতর আহত ইউসুফ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ ফেব্রুয়ারি মারা যান। এরপর ইউসুফ আলীর স্ত্রী শাহিনুর আক্তার বাদী হয়ে আজগর আলীসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলাটি তদন্ত করেন রাঙ্গুনিয়া থানার সেসময়ের পরিদর্শক (তদন্ত) খান নুরুল ইসলাম। ২০২২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
বৃহস্পতিবার রায়ে আসামিরা সবাই খালাস পাওয়ার পর পিপি অশোক কুমার দাশ বলেন, “জবানবন্দি ও জেরায় হত্যার ঘটনা প্রমাণিত। কিন্তু আসামিরাই যে জড়িত তা প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় আসামিরা খালাস পেয়েছে। এ কারণে আদালত তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।”
আসামিপক্ষের আইনজীবী উজ্জ্বল সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তদন্ত কর্মকর্তা যে জব্দ তালিকা আদালতে উপস্থাপন করেছেন, এর সঙ্গে সাক্ষ্যে দেওয়া বক্তব্যের মিল ছিল না। ঘটনাস্থলে হাজির হওয়া এবং জব্দ তালিকা তৈরির সময়ে গরমিল পাওয়া গেছে। আমরা বিষয়গুলো আদালতের নজরে এনেছি।
“রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় সব আসামি খালাস পেয়েছে। ইউসুফ হত্যাকে কেন্দ্র করে নিরাপরাধ লোকদের ফাঁসাতে আষাঢ়ে গল্প তৈরি করা হয়। আইও’র বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।”
এদিকে রায় ঘোষণার পর আদালতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নিহতের স্ত্রী ও মামলার বাদী শাহিনুর আক্তার।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “এই আসামিরাই আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আমি ন্যায়বিচার পাইনি। আমার তিনটা সন্তান আজ এতিম। আসামিরা প্রতিনিয়ত আমাদের হুমকি দিচ্ছে। গতকালও আমার ছেলেকে বলেছে, মেরে ফেলবে। আমি স্বামী হত্যাকারীদের বিচার চাই।”
বাদীপক্ষ চাইলে রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবে জানিয়ে পিপি অশোক কুমার দাশ বলেন, “প্রয়োজনে আমরা তাদের সহযোগিতা করব।”