Published : 18 Oct 2023, 03:15 PM
দুই বছর আগে দশমীর দিন চট্টগ্রামের জে এম সেন হলে হামলার ঘটনায় করা মামলার আসামিরা জামিনে মুক্ত, তাই এবারও আশঙ্কা নিয়ে পূজার আয়োজন করার কথা বলছেন আয়োজকরা।
শারদীয় দুর্গা পূজা উপলক্ষে বুধবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগরের নেতারা এই আশঙ্কার কথা বলেন।
তবে পুলিশ বলছে ওই মামলার আসামিদের ‘নজরদারিতে’ রাখা হয়েছে।
পূজা উদযাপন পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি আশীষ কুমার ভট্টাচার্য বলেন, “২০২১ সালে জে এম সেন হলে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী হামলা চালিয়েছিল। পরে পুলিশ তাদের বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছিল। পরে তাদের প্রায় সবার জামিন হয়ে গেছে। দাবি জানাই, বিচারের জন্য আসামিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক।
“এই বাংলাদেশে সবার ধর্ম পালনের অধিকার আছে। কিন্তু সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী যে কোনো সময় যে কোনো ঘটনা ঘটাতে পারে। তাই আমরা সবার সহযোগিতা চাই। দুর্গা পূজা বাঙালির উৎসব হিসেবে সব ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতা চাই।”
জে এম সেন হলে হামলার ঘটনায় হওয়া মামলার সর্বশেষ পরিস্থিতি বিষয়ে জানতে চাইলে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল বলেন, “আমরা মাননীয় পুলিশ কমিশনারের সাথে দেখা করেছি। উনাকে বলেছি, হামলার ভিডিও ফুটেজে যাদের দেখা গেছে তাদের প্রত্যেককে যেন পূজার সময় বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়।
“কোতোয়ালি থানার ওসির সাথে দেখা করে দ্রুত অভিযোগপত্র দিতে বলেছিলাম।”
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ওসি জাহিদুল কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জে এম সেন হলের ঘটনায় ওই মামলায় চার্জশিট দিয়েছি। সেটি বিজ্ঞ আদালতে বিচারের জন্য আছে। তবে বিস্তারিত এখনই নথি না দেখে বলতে পারছি না।”
অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আশীষ কুমার ভট্টাচার্য বলেন, “ওসি সাহেবের সাথে আমরা প্রায় আড়াই সপ্তাহ আগে দেখা করেছিলাম। হয়ত এরমধ্যে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন। তবে অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি আমাদের জানা নেই। এর কপিও আমরা এখন পর্যন্ত পাইনি।”
জামিনে থাকা আসামিদের বিষয়ে পরিষদ নেতৃবৃন্দের শঙ্কার কথা জানালে ওসি জাহিদুল কবির বলেন, “জামিন পাওয়া আইনগত অধিকার। তবে কেউ যাতে আকস্মিকভাবে কোনো কিছু করতে না পারে সে বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে নজরদারি আছে।”
২০২১ সালের ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীর দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর কেন্দ্রস্থলে পূজা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে হওয়া জে এম সেন হলের পূজা মণ্ডপে হামলা চালানো হয়।
সেদিন শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে নগরীর আন্দরিকল্লা শাহে জামে মসজিদের সামনে থেকে কুমিল্লায় কথিত কোরআন অবমাননার প্রতিবাদে সমাবেশে শেষে মিছিল শুরু হয়। ওই মিছিল আন্দরকিল্লা হয়ে চেরাগী পাহাড়ের দিকে চলে যাওয়ার সময় জে এম সেন হল পূজা মণ্ডপে হামলা চালানো হয়।
ওই ঘটনার পর পূজা উদযাপন পরিষদ সেখানে অবস্থান গ্রহণ এবং নিরাপত্তা না পাওয়া পর্যন্ত প্রতিমা বিসর্জন না দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
পরে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন ও নগর পুলিশ কমিশনার সালেহ মো. তানভীরসহ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেন। তাদের আশ্বাসে সেদিন নির্ধারিত সময়ের ৫ ঘণ্টা পর প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
পূজা মণ্ডপে হামলার প্রতিবাদে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত পরদিন চট্টগ্রামে আধা বেলা হরতালের ডাক দেন।
জে এম সেন হলে হামলার সময় কয়েকজনকে আটক করেছিল স্থানীয়রা। পরে পুলিশ আশপাশের এলাকা থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করে। রাতে পুলিশ বাদী হয়ে ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনের ধারায় ৮৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে।
হামলার ভিডিও দেখে সে সময় ৮৩ জনকে শনাক্তের পর পুলিশ জানিয়েছিল, হামলাকারীদের অধিকাংশই ছিলেন নগরীর টেরিবাজার এলাকার বিভিন্ন দোকান কর্মচারী ও খলিফাপট্টি এলাকার বাসিন্দা। যাদের বেশির ভাগই সরকারবিরোধী বিভিন্ন দলের সমর্থক। তখন ১৪ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করেছিল পুলিশ।
মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ জানান, এবার নগরীর ২৯৩টি মণ্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে।
প্রশ্ন ছিল, এরমধ্যে কতটি মন্ডপ ঝুঁকিপূর্ণ? জবাবে আশীষ কুমার ভট্টাচার্য বলেন, “দুই বছর আগে সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তার চাদরে ছিল জে এম সেন হলের পূজা। সেখানেই হামলা হয়েছিল। এখন তাহলে বলতে হয়, সবই ঝুঁকিপূর্ণ, আবার কোনোটাই ঝুঁকিপূর্ণ নয়। সবাইকে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
“পুলিশ কমিশনার বলেছেন, চার স্তরের নিরাপত্তা থাকবে। প্রতিটি মণ্ডপে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা থাকবেন। প্রশাসন সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। আমাদেরও চারটি টিম সার্বক্ষণিক মাঠে থাকবে।”
পরিষদের সাবেক সভাপতি সাধন ধর, চন্দন তালুকদার, বিমল কান্তি দে ও অরবিন্দ পাল অরুন এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুমন দেবনাথ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রামে পূজামণ্ডপে হামলা: ৮৩ জন শনাক্ত, মামলা
চট্টগ্রামে আধাবেলা হরতাল পালিত